খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এলাকা ভবানীপুরে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরই দেখা দিয়েছে চরম চাঞ্চল্য। তালিকা থেকে প্রায় ৪৫ হাজার ভোটারের নাম বাদ যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। বিষয়টি কতটা যুক্তিযুক্ত বা এর মধ্যে কোনও কারচুপি রয়েছে কিনা, তা জানতে ভবানীপুর বিধানসভা এলাকায় এবার ‘দুয়ারে স্ক্রুটিনি’ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাসকদল।
এই প্রক্রিয়ার আওতায়, তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ লেভেল অফিসাররা (BLO) বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের নাম ও তথ্য যাচাই করবেন।
এক ধাক্কায় বাদ ২১.৭% নাম!
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ভবানীপুর বিধানসভা এলাকায় মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ২ লক্ষ ৬ হাজার ২৯৫। কিন্তু মঙ্গলবার প্রকাশিত খসড়া তালিকায় নাম রয়েছে মাত্র ১ লক্ষ ৬১ হাজার ৫০৯ জনের। অর্থাৎ, এই কেন্দ্র থেকে মোট ৪৪ হাজার ৭৮৭ জন ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে, যা কিনা মোট ভোটারের প্রায় ২১.৭ শতাংশ!
গোটা রাজ্যজুড়ে খসড়া তালিকা থেকে মোট ৫৮ লক্ষেরও বেশি ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মৃত, স্থানান্তরিত (Shifted) এবং নিখোঁজ (Missing) ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার কথাই বলা হলেও, ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে এই বিপুল সংখ্যক নাম বাদ পড়ায় চরম অস্বস্তিতে রাজ্যের শাসকদল।
🕌 ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়তি নজর কেন?
তৃণমূল কংগ্রেসের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে স্পষ্ট নির্দেশ, “কোনও অবস্থাতেই কোনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ হওয়া উচিত নয়।” প্রতিটি বাদ পড়া ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিষয়টি যাচাই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভবানীপুর বিধানসভা এলাকার মধ্যে কলকাতা পুরসভার ৬৩, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪, ৭৭, ৮২ নম্বর ওয়ার্ড রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ৭০, ৭২ এবং ৭৭ নম্বর এলাকা থেকেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নাম বাদ পড়েছে। জানা গিয়েছে, এই ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডটি সবচেয়ে বেশি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। তাই এই তিনটি ওয়ার্ডেই স্ক্রুটিনির ক্ষেত্রে বাড়তি জোর দিতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস।
শীর্ষ নেতৃত্ব কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, শীঘ্রই শুনানি (Hearing) শুরু হতে চলেছে। সেই সময় সমস্ত ভোটারদের, বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত ভোটারদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
📊 ৪ কেন্দ্রে বাদ ২.১৬ লক্ষ নাম!
ভবানীপুর ছাড়াও কলকাতা পোর্ট, বালিগঞ্জ ও রাসবিহারী—এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে একত্রে ২ লক্ষ ১৬ লক্ষেরও বেশি নাম খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে। যেখানে এই চার কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ৯.০৭ লক্ষ। স্বাভাবিকভাবেই, এই বিশাল সংখ্যক নাম বাদ পড়ার বিষয়টি যে তৃণমূল মোটেই সহজভাবে দেখছে না, তা ‘দুয়ারে স্ক্রুটিনি’ চালু করার সিদ্ধান্তে স্পষ্ট।