ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পুনর্জন্ম, এক ভারতীয়র হাতেই ফিরল ইতিহাসের চাকা

এক সময় ছলে-বলে-কৌশলে গোটা ভারত দখল করে নিয়েছিল যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর যার ক্ষমতা দেখেছিল বাংলা তথা ভারতবাসী, সেই কোম্পানিই এখন এক ভারতীয় ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন। নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর ভারতের স্বাধীনতার শেষ স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছিল যে সংস্থা, সেই কোম্পানির মালিকানা আজ এক ভারতীয়ের হাতে, এ যেন ইতিহাসের এক মধুর প্রতিশোধের গল্প।

১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত, এই একশো বছর ধরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শোষণ ও লুঠেরাজ দেখেছিল ভারতবর্ষ। ‘সোনার ভারত’ পরিণত হয়েছিল কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সম্পদে। কিন্তু ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর এই কোম্পানির ভাগ্যচক্র ঘুরে যায়। অবশেষে, ১৮৭৪ সালে একপ্রকার বন্ধই হয়ে যায় এই ঐতিহাসিক সংস্থাটি।

তবে এখানেই গল্পের শেষ নয়। দীর্ঘ বিরতির পর ২০১০ সালে এই সংস্থাটিকে আবার ফিরিয়ে আনা হয়, আর এখানেই লুকিয়ে সেই প্রতিশোধের কাহিনি। যে কোম্পানি একদিন ভারতকে লুঠ করেছিল, সেই সংস্থার মালিকানা চলে গেল এক ভারতীয়ের হাতেই। লন্ডন-প্রবাসী ভারতীয় ব্যবসায়ী সঞ্জীব মেহতা ২০১০ সালে এই সংস্থাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ২০১১ সালে ভারতীয় শিল্পপতি আনন্দ মাহিন্দ্রা এই ব্যবসার একটি অংশীদারিত্ব কিনে নেন।

বর্তমানে ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ একটি বিলাসবহুল পণ্য প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতা সংস্থা হিসেবে পরিচিত। তারা বিলাসবহুল জিনসপত্র, উপহার সামগ্রী, উন্নতমানের চা, কফি, অন্যান্য পানীয় এবং গৃহস্থালীর জিনিসপত্র তৈরি ও বিক্রি করে। এছাড়াও, এখানে স্বর্ণমুদ্রা, বিভিন্ন ঐতিহাসিক বই এবং অন্যান্য নানা ধরনের মূল্যবান পণ্যও পাওয়া যায়। এটি এখন আর ঔপনিবেশিক শক্তির প্রতীক নয়, বরং আধুনিক বিশ্বের প্রেক্ষাপটে এক বিলাসবহুল ব্র্যান্ড হিসেবে টিকে আছে, যার মালিকানা আজ এক ভারতীয়র হাতে – ইতিহাসের এক বিস্ময়কর পুনরাবৃত্তি।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy