পশ্চিম মেদিনীপুরের লোয়াদায় বেহাল রাস্তার কারণে অ্যাম্বুলেন্স গ্রামে ঢুকতে না পারায় ১৩ মাসের এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠতেই উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে লোয়াদা রাজ্য সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করেছেন ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ তোলা হবে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন জয়েন্ট বিডিও, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান-সহ পুলিশের বিশাল বাহিনী।
জানা গেছে, লোয়াদার কাঁকড়া গ্রাম থেকে রাজ্য সড়ক পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। বিগত ১৫-২০ বছর ধরে এই রাস্তায় পিচ পড়েনি বলে অভিযোগ। বর্ষাকালে জল জমে, কাদা হয়ে রাস্তার অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে যাতায়াত করাও দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। জুন মাসেও এই বেহাল রাস্তার কারণে অ্যাম্বুলেন্স না ঢোকায় বাদল মান্ডি নামে এক ব্যক্তিকে খাটিয়ায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। গতকাল, বৃহস্পতিবারও একই কারণে ১৩ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়, যা স্থানীয়দের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে।
শিশুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই আজ সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ স্থানীয় বাসিন্দারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পথ অবরোধে নামেন। হাতে কুড়ুল, কোদাল, লাঠি নিয়ে শত শত গ্রামবাসী রাস্তার মাঝখানে বসে পড়েন। টায়ার জ্বালিয়ে চলে তীব্র বিক্ষোভ ও স্লোগান, যার জেরে রাজ্য সড়কে বাস ও লরির দীর্ঘ সারি তৈরি হয় এবং যানজট চরমে পৌঁছায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছানো পুলিশের বিশাল বাহিনীর সামনেও স্থানীয়রা তাঁদের দাবিতে অনড় থাকেন। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, “বারবার বলেও কাজ হয়নি। এই রাস্তা না সারালে আমরা পথ ছাড়ব না।”
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন বিডিও প্রিয়ব্রত রাড়ি। তিনি বলেন, “জয়েন্ট বিডিও গিয়েছেন। কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হচ্ছে।” কাঁকড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পিঙ্কু পান্ডা রাস্তা সারানোর আশ্বাস দিলেও, এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তন্ময় দাস সরাসরি তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। তিনি বলেন, “ওই গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে। প্রধানও তৃণমূলের। এটা তৃণমূল সরকারের ব্যর্থতা। পথশ্রীর নামে শুধু দুর্নীতি হচ্ছে। টাকা লুটে খাচ্ছেন তৃণমূলের নেতারা।”
বেহাল রাস্তা এবং তার জেরে ঘটে যাওয়া একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনা আসন্ন পঞ্চায়েত ও বিধানসভা নির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।