বীরভূমের রাজনীতিতে ফের স্বমহিমায় ফিরছেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল। সম্প্রতি একটি সরকারি অনুষ্ঠানে তাঁর নাম কার্যত ১ নম্বরে রাখা হয়েছে, যা এই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। এই ঘটনাকে অনেকেই তাঁর ‘কামব্যাক’ হিসেবে দেখছেন, বিশেষ করে যখন ভাইরাল অডিও এবং দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ার পর তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল।
গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে দলীয় মহলে একধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল। যদিও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার তাঁর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন, কিন্তু সম্প্রতি একটি ভাইরাল অডিও ক্লিপ সেই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। ওই অডিওতে এক পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে অনুব্রতর কথোপকথন ঘিরে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এর ফলস্বরূপ, বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে তাঁকে ব্রাত্য রাখা হয় এবং দলের একাধিক সভায় তাঁর উপস্থিতি কমে যায়। এমনকি, ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসের সভাতেও তাঁকে পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল।
কোর কমিটির গুরুত্ব:
তবে, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বীরভূম সফরের পর ছবিটা দ্রুত বদলে যায়। জেলা কোর কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে অনুব্রত মণ্ডলও উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকের পরই তাঁকে কোর কমিটির আহ্বায়ক করা হয়, যা বীরভূমের রাজনীতিতে তাঁর গুরুত্ব পুনরুদ্ধার করে। এরপরই তাঁর নিরাপত্তা ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং দলীয় অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি আবার বাড়তে থাকে।
কাজল শেখের ওপর প্রাধান্য:
সাম্প্রতিক এই পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়েছে বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সরকারি অনুষ্ঠানে। ৭ থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত চলা এই অনুষ্ঠানে, আমন্ত্রিতদের তালিকায় অনুব্রত মণ্ডলের নাম ১ নম্বরে রাখা হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, অনুব্রত-বিরোধী হিসেবে পরিচিত কাজল শেখের নাম রয়েছে ৪ নম্বরে। বীরভূমের রাজনীতিতে এই দুই নেতার সংঘাত সর্বজনবিদিত। তাই, কাজল শেখের ওপর অনুব্রতর এই প্রাধান্যকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তাঁর ‘কামব্যাক’ হিসেবেই দেখছেন।
এই ঘটনা একদিকে যেমন অনুব্রত মণ্ডলের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রত্যাবর্তনকে চিহ্নিত করছে, অন্যদিকে তৃণমূলের অভ্যন্তরে ক্ষমতার পুনর্বিন্যাস নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। দলের অন্দরে একদিকে যখন অনুব্রতর গুরুত্ব বাড়ছে, তখন তাঁর বিরোধীদের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে এখন চলছে জোর জল্পনা। বীরভূমের রাজনীতিতে এই নতুন অধ্যায় কী বার্তা দেয়, তা জানতে আগামী দিনগুলোর দিকেই সবার নজর।