বীরভূমের তিন গ্রাম জলবন্দি, নদীর জলে তলিয়ে গেলো দুটি স্কুল, পরীক্ষা স্থগিত

টানা কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিতে বীরভূমের লাভপুরের হরিপুর, জয়চন্দ্রপুর এবং চতুর্ভুজপুর গ্রামের বাসিন্দারা জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। কুয়ে নদী ও জামনা বিলের জলে গ্রামের প্রধান রাস্তাটি তলিয়ে যাওয়ায় বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর ফলে এই অঞ্চলের দু’টি স্কুলের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঠিবা পঞ্চায়েত এলাকার এই তিনটি গ্রাম বর্ষাকালে প্রায় ৪-৫ মাস বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো থাকে। এখানকার প্রায় ১০০ জন ছাত্রছাত্রী জামনা-ধ্রুবাবাটি বসন্তকুমারী গার্লস এবং জামনা হাইস্কুলে পড়াশোনা করে। গার্লস হাইস্কুলে সোমবার থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছিল এবং মঙ্গলবার থেকে জামনা হাইস্কুলেও পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শনিবার রাস্তা ডুবে যাওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াত অসম্ভব হয়ে পড়ে।

ছাত্রীরা জানায়, প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা তাদের হাঁটুপানি ভেঙে হেঁটে আসতে হয়েছে এবং এরপর নৌকো করে স্কুল পৌঁছাতে হয়েছে। এতে তাদের পোশাক ভিজে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। এই পরিস্থিতির কারণে দুই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকরা আপাতত পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এই তিন গ্রামের বাসিন্দাদের বর্ষার সময় বাইরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো প্রশাসনের দেওয়া নৌকো অথবা গ্রামবাসীদের ব্যক্তিগত লোহার কড়াই। গত বছর জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে জামনা থেকে জয়চন্দ্রপুর পর্যন্ত চার কিলোমিটারের ঢালাই রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু এই রাস্তার মাঝে একটি কজওয়ে নির্মাণের কাজ এখনো অসম্পূর্ণ থাকায় বর্ষায় এই রাস্তাটি গ্রামবাসীদের দুর্ভোগ কমাতে পারেনি।

গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন যে, তাদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে নিচু রাস্তা এবং উঁচু সেতুর পরিবর্তে কজওয়ে তৈরি করা হচ্ছে, যা স্থায়ী সমাধান দেবে না। জয়চন্দ্রপুরের গুণধর ভৌমিক বলেন, “বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং জীবিকার জন্য আমাদের কীর্ণাহার যেতেই হয়। রাতে কেউ অসুস্থ হলে লোহার কড়াই ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না।”

লাভপুরের বিডিও শিশুতোষ প্রামাণিক বলেছেন, “গ্রামবাসীদের পারাপারের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নৌকোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাস্তা এবং কজওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্ষার কারণে সাময়িকভাবে কজওয়ে নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে। এই কাজ সম্পূর্ণ হলে গ্রামবাসীদের দুর্ভোগ অনেকটাই কমবে বলে আমরা আশা করি।”

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy