বিহার ভোটে বিজেপি-র ‘জাদুকর’ ফর্মুলা! প্রথম তালিকায় ৭০ শতাংশ আসন পেল এই দুই সম্প্রদায়, দেখুন অঙ্ক!

২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের জন্য বহু প্রতীক্ষিত প্রথম প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)। ১০১টি আসনের মধ্যে ৭১ জন প্রার্থীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে এই তালিকায়। এই তালিকায় দল অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে জাতিগত সমতা, বয়স, আঞ্চলিকতা এবং লিঙ্গভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের একটি ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করেছে।

বিহারের রাজনীতিতে জাতপাতের সমীকরণ এখনও সবচেয়ে নির্ণায়ক ফ্যাক্টর। সেই কথা মাথায় রেখে, বিজেপি তাদের সামাজিক জোটকে আরও প্রসারিত করার কৌশল নিয়েছে।

৪ প্রধান সবর্ণ সম্প্রদায় (Generals) কতটা গুরুত্ব পেল?
ব্রাহ্মণ, ভূমিহার, রাজপুত এবং কায়স্থ—এই চারটি প্রথাগত সবর্ণ সম্প্রদায় বিজেপির স্থায়ী ভোটব্যাঙ্ক। প্রথম তালিকায় প্রায় ২৭-৩০ শতাংশ প্রার্থী এই সবর্ণ শ্রেণী থেকে এসেছেন।

ভূমিহার: এই সম্প্রদায়ের প্রার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, বিশেষ করে পাটনা, মুজফ্ফরপুর এবং বক্সার জেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলিতে।

রাজপুত: পশ্চিম বিহারের (সারন, ভোজপুর, কাইমুর এবং আরা) আসনগুলিতে রাজপুত প্রার্থীদের বেশি টিকিট দেওয়া হয়েছে।

ব্রাহ্মণ ও কায়স্থ: সীমিত সংখ্যায় এলেও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহুরে কেন্দ্রগুলিতে তাঁদের প্রার্থী করা হয়েছে।

ওবিসি (OBC) ভোটব্যাঙ্কেই মূল লক্ষ্য, মিলল ৪০ শতাংশ আসন
বিজেপি-র প্রথম তালিকায় প্রায় ৪০ শতাংশ প্রার্থী এসেছেন ওবিসি (OBC) শ্রেণী থেকে। এর মাধ্যমে বিজেপি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—দল আর কেবল সবর্ণদের উপর নির্ভরশীল থাকতে চায় না।

বিজেপি-র কৌশল: যাদব সম্প্রদায়ের প্রার্থীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম রেখে দল কুর্মি, কোইরি (কুশওয়াহা), বানিয়া, তেলি, নোনিয়া এবং কুশওয়াহা সম্প্রদায়ের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।

নীতিশ কুমারের ভোটে থাবা: নীতিশ কুমারের প্রথাগত ভোটব্যাঙ্ক বলে পরিচিত কুর্মি সম্প্রদায় থেকে প্রায় ৮-৯ জন, কোইরি (কুশওয়াহা) থেকে প্রায় ১০ জন প্রার্থীকে টিকিট দেওয়া হয়েছে। তেলি এবং নোনিয়ার মতো অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী থেকেও ৪-৫ জনকে প্রার্থী করা হয়েছে। এর মাধ্যমে JDU-এর উপর নির্ভরতা কমানোর স্পষ্ট কৌশল দেখা যাচ্ছে।

অতি পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় (EBC) এবং দলিত ভোট
রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৩৬ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকা অতি পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের (EBC) জন্য বিজেপি প্রায় ২০ শতাংশ আসন বরাদ্দ করেছে। নাপিত (Nai), কামার (Lohar), ডোম (Dhoobi), মাঝি (Mallaha) এবং কুমোর (Kuhar)-এর মতো জাতিগুলি প্রাধান্য পেয়েছে। বিজেপি এখানে “EBC বনাম যাদব” রাজনৈতিক আখ্যানকে আরও শক্তিশালী করতে চাইছে।

দলিত (SC) সমীকরণ: এসসি সংরক্ষিত ৩৮টি আসনের মধ্যে প্রথম তালিকায় ১০-১২ জন প্রার্থী দলিত শ্রেণী থেকে এসেছেন। চিরাগ পাসওয়ানের এলজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে পাসওয়ান সম্প্রদায়ের প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জিতেন রাম মাঝির প্রভাবকে ভারসাম্য দেওয়ার জন্য মাঝি এবং মুসাহার সম্প্রদায় থেকেও টিকিট দেওয়া হয়েছে।

নারীর শক্তি: প্রথম তালিকায় ১০ শতাংশ মহিলা
বিজেপি-র এই তালিকায় প্রায় ১০ শতাংশ মহিলা প্রার্থী রয়েছেন। এদের অধিকাংশই হয় দীর্ঘদিনের দলীয় কর্মী অথবা স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবার থেকে এসেছেন।

রাজনৈতিক বার্তা: নীতিশ সরকারের “মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা”-র মতো প্রকল্পের মোকাবিলায় বিজেপি “মহিলা ক্ষমতায়ন” ইস্যুকে সামনে আনতে চাইছে।

সামাজিক বৈচিত্র্য: মহিলা প্রার্থীদের এক-তৃতীয়াংশ এসসি/ওবিসি শ্রেণী থেকে এসেছেন। অতি পিছিয়ে পড়া জাতি থেকেও কিছু মহিলা প্রার্থী রয়েছেন, যা সামাজিক বৈচিত্র্যের প্রতীক।

ফোকাসে কোন জেলা ও বিজেপি-র মূল বার্তা?
প্রথম তালিকায় বিজেপি সিওয়ান, সারণ, গয়া, মুজফ্ফরপুর, দারভাঙ্গা এবং পাটনা জেলার আসনগুলিতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।

উত্তর বিহার (মিথিলা এবং কোসি অঞ্চল) থেকে প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং দক্ষিণ বিহার (মগধ এবং শাহাবাদ) থেকে ৩০ শতাংশ প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।

কৌশল: বক্সার, ভোজপুর, গয়া, পাটনা, দারভাঙ্গার মতো ঐতিহ্যবাহী ঘাঁটিতে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার পাশাপাশি সীমাঞ্চলের মতো মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাইছে বিজেপি।

এই প্রথম তালিকা থেকে স্পষ্ট, বিজেপি সবর্ণদের ভারসাম্য বজায় রেখে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর অংশগ্রহণ বাড়াতে, EBC ও দলিত ভোটকে মজবুত করতে এবং তরুণ ও মহিলা ভোটারদের আকর্ষণ করতে চেয়েছে। এটিই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে দল বিহারের সামাজিক কাঠামোকে গভীরভাবে বুঝে টিকিট বিতরণ করেছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy