বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদবের ভোটার তালিকায় নাম না থাকার দাবি ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই বিষয়ে ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) তেজস্বীর কাছে তাঁর ইলেক্টরস ফটো আইডেন্টিটি কার্ড (ইপিক) সংক্রান্ত বিশদ বিবরণ চেয়ে একটি নোটিস জারি করেছে। নির্বাচন কমিশনের দাবি, তেজস্বীর অভিযোগ “ভিত্তিহীন” এবং “ভ্রান্তিমূলক”।
গত শনিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে তেজস্বী যাদব দাবি করেন যে, বিহারে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়ার পর প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় তাঁর নাম নেই। তিনি তাঁর ইপিক নম্বর (RAB2916120) ব্যবহার করে ইসিআই-এর অনলাইন পোর্টালে নিজের নাম খুঁজে না পাওয়ার প্রমাণও দেখান।
তবে, নির্বাচন কমিশন দ্রুত এই দাবি খারিজ করে দিয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, তেজস্বীর নাম পাটনা সাহিব লোকসভা কেন্দ্রের ৪১৬ নম্বর খসড়া ভোটার তালিকায় তালিকাভুক্ত রয়েছে। ইসিআই আরও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে যে, তেজস্বী যে ইপিক নম্বরটি ব্যবহার করেছেন, তা অস্তিত্বহীন এবং এটি “জাল” হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই গুরুতর অভিযোগে তেজস্বীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
তেজস্বীর অভিযোগ এবং ইসিআই-এর জবাব:
সাংবাদিক সম্মেলনে তেজস্বী যাদব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার নাম ভোটার তালিকায় নেই। আমি কীভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব?” তিনি আরও অভিযোগ করেন, এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিহারের ভোটার তালিকা থেকে প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, যা রাজ্যের মোট ভোটারের ৮.৫ শতাংশ। তিনি দাবি করেন, “প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবে ভোটারদের ঠিকানা, বুথ নম্বর বা ইপিক নম্বর প্রকাশ করেনি, যাতে কার নাম বাদ পড়েছে তা জানা না যায়।” তেজস্বী এই প্রক্রিয়াকে “ভোট চুরি” এবং “গণতন্ত্রের হত্যা” হিসেবে অভিহিত করেন।
এর জবাবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে, তেজস্বীর নাম ২০১৫ এবং ২০২০ সালের ভোটার তালিকায় RAB0456228 ইপিক নম্বর সহ তালিকাভুক্ত ছিল এবং বর্তমান খসড়া তালিকাতেও এই নম্বরে তাঁর নাম রয়েছে। ইসিআই জোর দিয়ে বলেছে যে, তেজস্বী যাদব কর্তৃক উল্লিখিত দ্বিতীয় ইপিক নম্বরটি (RAB2916120) গত ১০ বছরের কোনও রেকর্ডেই পাওয়া যায়নি এবং এটি “অ-অফিসিয়াল চ্যানেল” থেকে প্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কমিশন এই নম্বরের সত্যতা যাচাই করতে তেজস্বীর কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে এবং হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, যদি এটি জাল প্রমাণিত হয়, তবে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হতে পারে।
বিজেপির প্রতিক্রিয়া:
বিজেপি এই ঘটনাকে “মিথ্যা” এবং “রাজনৈতিক নাটক” আখ্যা দিয়েছে। বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, “তেজস্বী যদি দুটি ইপিক কার্ড রাখেন, তবে এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রতারণা। তাঁর দলের কর্মীরা কতগুলো ইপিক কার্ড ব্যবহার করছেন? এই ঘটনা আরজেডি-র ভোট জালিয়াতির প্রবণতাকে প্রকাশ করে।” বিজেপি আইটি সেল প্রধান অমিত মালবিয়া এক্স-এ (টুইটার) পোস্ট করে বলেন, “তেজস্বী একটি জাল ইপিক নম্বর দেখিয়ে মিথ্যা বর্ণনা তৈরি করার চেষ্টা করেছেন।”
পাটনা জেলা প্রশাসনের বক্তব্য:
পাটনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. থিয়াগরাজন এসএম এই বিষয়ে বলেন, “তেজস্বী যাদবের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় ২০৪ নম্বর পোলিং স্টেশন, বিহার অ্যানিমাল সায়েন্স ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরি ভবনে তালিকাভুক্ত রয়েছে। তিনি ২০২০ সালের নির্বাচনে যে ইপিক নম্বর ব্যবহার করেছিলেন, তা এখনও বৈধ।” তিনি আরও বলেন, “তেজস্বী যদি অন্য কোনো ইপিক নম্বরের কথা বলছেন, তবে তা তদন্তের বিষয়।”
নির্বাচন কমিশনের নোটিস এবং তেজস্বীর ইপিক নম্বর নিয়ে এই বিতর্ক বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তদন্ত এবং তেজস্বীর জবাব এই ঘটনার পরবর্তী দিক নির্ধারণ করবে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ এবং বিজেপির পাল্টা আক্রমণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।