উৎসব শেষে উমা-বিদায়ের দিনেও পিছু ছাড়ছে না আতঙ্ক। ২০২২ সালের বিসর্জনের দিনে ডুয়ার্সের মাল নদীতে হড়পা বানে ৯ জন দর্শনার্থীর মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতি মাথায় রেখে এবার জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন বিসর্জন নিয়ে চূড়ান্ত কড়া পদক্ষেপ করেছে। পাহাড়ি মাল নদীতে জল বাড়ছে এবং ভুটান থেকে আসা খরস্রোতা নদীগুলোতেও হড়পা বানের আশঙ্কা থাকায় প্রতিটি ঘাটে বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২ অক্টোবর ও ৩ অক্টোবর জলপাইগুড়ি জেলায় বৃষ্টির কমলা সতর্কতা জারি রয়েছে, যা প্রশাসনের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।
কাউকে নামতে দেওয়া হবে না খরস্রোতা নদীতে
পুরনো ঘটনার থেকে শিক্ষা নিয়ে দশমীর ঘাটে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন নিয়ে বিশেষ সতর্ক জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার পাহাড় থেকে নেমে আসা খরস্রোতা নদীতে বিসর্জনের সময় কাউকে নামতে দেওয়া হবে না।
প্রশাসন এই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে:
ব্যারিকেড ও সতর্কতা: প্রত্যেক নিরঞ্জন ঘাটে বাঁশ ও মোটা দড়ি দিয়ে ব্যারিকেড করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের সেই ব্যারিকেডের ভেতর হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে।
নিরাপত্তা ও কর্মী: ঘাট জুড়ে থাকবে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সিভিল ডিফেন্স-সহ পুরসভার কর্মীরাই বিসর্জনের ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জনের কাজ করবেন।
পর্যাপ্ত প্রস্তুতি: ঘাটগুলিকে জেসিবি দিয়ে নদীর পাড় শক্ত করা হয়েছে এবং পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে কোনও মতেই দর্শনার্থীরা নদীতে না নামতে পারেন।
মালবাজার, মেটেলি, ধূপগুড়ি, নাগরাকাটা, বানারহাট, ময়নাগুড়ির মতো খরস্রোতা নদীতে বিসর্জনের ক্ষেত্রে কড়া নিয়ম জারি হয়েছে। বিসর্জনের ২৪ ঘণ্টা আগে পাহাড় ও সমতল এলাকায় ভারী বৃষ্টি হলে খরস্রোতা নদীতে কাউকে নামতে দেওয়া হবে না।
ডুবুরি, বোট ও সিসিটিভি নজরদারি
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক শামা পারভিন বলেন, “মালবাজারে বিসর্জন ঘাটে হড়পা বানের ফলে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তারপর আমরা সেচ দফতরের পক্ষ থেকে মাল নদীতে বিসর্জনের ঘাট তৈরি করেছি, যেখানে বাঁশের ব্যারিকেড থাকবে। কাউকে নদীতে নামতে দেওয়া হবে না।”
পুলিশ সুপার উমেশ খান্ডবাহাল বলেন, “আমরা বিসর্জন নিয়ে সতর্ক আছি। নদীতে কাউকে নামতে দেওয়া হবে না। ঘাটগুলিতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
কোনো রকমের ঝুঁকি এড়াতে পুজো কমিটি বা দর্শনার্থীদের কেউ যাতে নির্দেশ অমান্য করতে না পারে তার জন্য বিসর্জন ঘাট জুড়ে থাকবে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রশিক্ষিত ডুবুরি, স্পিড বোট ও নৌকা, লাইফ জ্যাকেট এবং সিসিটিভি নজরদারি।