বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব? পেনশন-পিএফ নিজেদের হাতে নিচ্ছে রাজ্য শিক্ষা দফতর, তীব্র প্রতিবাদে শিক্ষক মহল

রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়াতে চলেছে রাজ্য শিক্ষা দফতর। এবার সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির হাত থেকে শিক্ষক ও কর্মীদের পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) এবং অন্যান্য অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা নিয়ন্ত্রণের ভার নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে শিক্ষা দফতর। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, যা প্রকাশ্যে আসার পর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জুটা)। জুটা এই পদক্ষেপকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের উপর সরাসরি আঘাত বলে বর্ণনা করেছে এবং এর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে।

শনিবার জুটা-র পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বিকাশ ভবন (রাজ্য শিক্ষা দফতরের সদর দফতর) ইতিমধ্যেই এইচআরএমএস (হিউম্যান রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) চালু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের বেতন, বদলি, ছুটি, পিএফ, পেনশন সহ সমস্ত বিষয় নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। জুটা-র অভিযোগ, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইনের প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং তাদের সমস্ত স্বাধিকার কেড়ে নেওয়ার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা। সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতীম রায় বলেন, “এবার বিকাশ ভবন থেকে পিএফ, পেনশন সহ সমস্ত অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকারের হাতে ছাড়ার জন্য চিঠি দেওয়া হলো।”

জুটা আরও দাবি করেছে যে, একদিকে যখন নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ, পড়াশোনা-গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে না, তখন অন্যদিকে রেজিস্ট্রার, ফিনান্স অফিসার সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলিতে নিয়োগ বন্ধ রাখা হয়েছে। তাদের মতে, শিক্ষাক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতি চলছে এবং সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত স্বাধিকার কেড়ে নিয়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ করা হচ্ছে।

শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে শিক্ষা প্রশাসনের ‘অপদার্থতা’ নিয়েও তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে, “এমন সব অপদার্থ শিক্ষা প্রশাসক এই রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা চালাচ্ছেন, যাঁরা সারা দেশে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার পরেও ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ফল বের করতে পারেন না। সেন্ট্রাল পোর্টাল দিয়ে সায়েন্স, আর্টস-এর ডিগ্রি পাঠক্রমে ভর্তিও শুরু করতে পারেন না।”

জুটা এই পরিস্থিতিতে সকল শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের একজোট হয়ে এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, এটি কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের অধিকার খর্ব করা নয়, বরং উচ্চশিক্ষার সার্বিক মান এবং স্বায়ত্তশাসনের উপর একটি বড় আঘাত।

এই নতুন নির্দেশিকার ফলে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা মহলে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বায়ত্তশাসনের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং আগামী দিনে এই ইস্যুতে রাজ্য সরকার ও শিক্ষক মহলের মধ্যে সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy