আর মাত্র মাস দেড়েক বাকি। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে মহালয়া নিয়ে এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে আলোচনা। আশ্বিনের শারদ প্রাতে আলোকবেণু বাজতে চলেছে খুব শিগগিরই। এই বছর মহালয়া পড়েছে ২১ অক্টোবর, রবিবার। এই দিনটি পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে মাতৃপক্ষের সূচনা করে, যার মাধ্যমে দুর্গাপুজোর আক্ষরিক অর্থে শুরু হয়। হিন্দু ধর্ম মতে, এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এদিনই অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল বলে প্রচলিত বিশ্বাস।
মহালয়া শব্দটির অর্থ ‘মহান আলয়’ বা আশ্রম, এবং এখানে দেবী দুর্গাই হলেন সেই মহান আলয়। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর অমরত্ব লাভ করেন। তাকে বধ করতে পারতেন একমাত্র কোনো নারী শক্তি। অসুরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দেবতারা যখন ত্রিশক্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের শরণাপন্ন হন, তখন তারা এক নারীশক্তির সৃষ্টি করেন, যিনি মহামায়ারূপী দেবী দুর্গা। দেবতাদের দেওয়া বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন। এই কারণে মহালয়া এবং দুর্গাপূজা অশুভ শক্তির বিনাশ এবং শুভ শক্তির বিজয়ের প্রতীক।
মহালয়ার দিন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার এক বিশেষ রীতি প্রচলিত আছে। এর পাশাপাশি এই দিনেই প্রতিমার চক্ষুদান করা হয়। যদিও আগে রাজবাড়ি বা জমিদার বাড়ির পুজোয় রথের দিন কাঠামো পুজো এবং মহাসপ্তমীর দিন চক্ষুদান হতো, কিন্তু দেবীপক্ষের সূচনা হওয়ায় পরে মহালয়ার দিনই প্রতিমার চক্ষু আঁকার চল শুরু হয়। বর্তমানে বারোয়ারি পুজোর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক শিল্পী কাজের সুবিধার জন্য মহালয়ার আগেও চক্ষু এঁকে ফেলেন। তবুও মহালয়ার দিনে চক্ষুদানের ধর্মীয় গুরুত্ব অপরিসীম। এদিন থেকেই বাঙালির মনে দুর্গাপুজোর এক ভিন্ন আমেজ শুরু হয়ে যায়।
২০২৫ সালের মহালয়ার দিনক্ষণ:
মহালয়া: ২১ অক্টোবর (৪ আশ্বিন), রবিবার।
অমাবস্যা তিথি শুরু: ২০ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ৫৪ মিনিট থেকে।
অমাবস্যা তিথি শেষ: ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত।
মহালয়ার দিন ভোরবেলায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শোনার ঐতিহ্য যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। মহালয়ার আগের ১৫ দিন ধরে চলে পিতৃপক্ষ, যা এই বছর ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। শাস্ত্র অনুযায়ী, পিতৃপক্ষে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধ-শান্তি ও তর্পণ করলে তাদের আত্মা শান্তি ও মুক্তি লাভ করে। মহালয়া শেষ হওয়ার মানেই দুর্গাপূজার আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। চারিদিকে তখন পুরোদমে শুরু হয়ে যায় পুজোর প্রস্তুতি ও উৎসবের আমেজ।