সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক বিশেষ পবিত্র সময়, অম্বুবাচী, এই বছর ২২ জুন (রবিবার) সকাল ১১:৫৯ মিনিটে শুরু হয়ে ২৬ জুন (বৃহস্পতিবার) সকাল ৭:০২ মিনিটে শেষ হবে। এটি মূলত প্রকৃতি এবং দেবী কামাখ্যার বার্ষিক রজঃস্বলা কাল হিসেবে পরিচিত। এই সময়ে সাধারণত দেবী পূজা বন্ধ থাকে এবং গৃহস্থের বিভিন্ন শুভকাজ থেকে বিরত থাকা হয়।
অম্বুবাচীর ধর্মীয় তাৎপর্য: নারী শক্তির বিশ্রামকাল
অম্বুবাচী হলো সৃষ্টির উৎস, শক্তির উদযাপন এবং নারীশক্তির বার্ষিক বিশ্রামকাল। বিশ্বাস করা হয়, এই সময়ে পৃথিবী উর্বরা হয়, ঠিক যেমন একজন নারী রজঃস্বলা হন। অসমের কামাখ্যা দেবীর পবিত্র গুহা থেকে এই সময়ে লালচে জল প্রবাহিত হয়, যা দেবীর রক্তধারা হিসেবে বিবেচিত। এই তিন-চার দিন কোনো মন্দিরে পূজা করা হয় না, এমনকি গীতা বা রামায়ণ পাঠও স্থগিত রাখা হয়। এটি এক ধরনের শক্তি সঞ্চয়ের সময়, যা নতুন সৃষ্টির জন্য প্রস্তুত হয়।
অম্বুবাচীতে পালনযোগ্য ৭টি শুভ রীতি ও ফলাফল:
এই বিশেষ সময়ে কিছু নির্দিষ্ট রীতি পালন করলে তা জীবনে শুভ ফল নিয়ে আসে বলে বিশ্বাস করা হয়:
- গৃহস্বামী ও স্ত্রীর একসঙ্গে উপবাস: এটি দম্পতিদের মধ্যে মানসিক বোঝাপড়া ও ভালোবাসা বৃদ্ধি করে।
- কামাখ্যা দেবীর স্তোত্র পাঠ: নিষ্ঠা সহকারে স্তোত্র পাঠ করলে দ্রুত আর্থিক সংকট কেটে যায়।
- লাল ফুল ও লাল চন্দনের দান: এই সময়ে লাল ফুল ও লাল চন্দন দান করলে চাকরি ও ব্যবসায় উন্নতি ঘটে।
- মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধা ও উপহার প্রদান: কুমারী বা ছোট মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং তাদের উপহার দিলে পরিবারে শান্তি ও মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ লাভ হয়।
- ভোরে পবিত্র স্নান ও সূর্যঅর্ঘ্য: এই সময়ে ভোরে পবিত্র স্নান করে সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করলে রোগমুক্তি ঘটে এবং শরীরে শক্তির উৎসারন হয়।
- গরিবকে অন্ন দান: দুস্থ ও গরিব মানুষকে অন্ন দান করলে জীবনের সকল বাধা দূর হয় এবং কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আসে।
- জলে সিঁদুর মিশিয়ে গৃহপ্রবেশে ছিটানো: অম্বুবাচী শেষে জলে সিঁদুর মিশিয়ে বাড়ির প্রবেশপথে ছিটালে অশুভ শক্তি দূর হয় এবং গৃহে সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়।
কোন কোন কাজ এই সময়ে ফলপ্রসূ হয়?
অম্বুবাচীর এই সময়ে কিছু নির্দিষ্ট কাজ করা হয় এবং কিছু কাজ থেকে বিরত থাকা হয়:
- ঘরে নতুন কিছু শুরু না করা: অম্বুবাচীর সময় নতুন কোনো কাজ বা শুভ অনুষ্ঠান শুরু করা হয় না।
- বিদ্যা পাঠ বন্ধ রাখা: এই সময়ে সাধারণত বিদ্যাচর্চা বা নতুন কিছু শেখা থেকে বিরত থাকা হয়।
- পর্দার আড়ালে নিয়ম করে গৃহদেবীর পুজো করা: যদিও প্রকাশ্য পূজা বন্ধ থাকে, তবে গৃহদেবীর নিত্য পুজো নিয়ম মেনে পর্দার আড়ালে চলতে পারে।
- ধ্যান ও নির্জনে জপ: এই সময়ে নীরবতা ও আত্মমগ্নতার গুরুত্ব বেশি। তাই ধ্যান ও নির্জনে জপ করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়।
- অবিবাহিত মেয়েদের জন্য পাত্র কামনার বিশেষ উপায়: এই সময়ে অবিবাহিত মেয়েদের জন্য ভালো পাত্র কামনার বিশেষ কিছু উপায় প্রচলিত আছে।
সংসারে শোক-মুক্তি ও আর্থিক সমৃদ্ধি লাভের বিশেষ উপায়:
অম্বুবাচী শেষ হওয়ার পর অর্থাৎ ২৬ জুন সকালে কিছু বিশেষ উপায় অবলম্বন করলে সংসারে শোক-মুক্তি ও আর্থিক সমৃদ্ধি আসে বলে বিশ্বাস করা হয়:
- গঙ্গাজল ছিটিয়ে দেবী কামাখ্যার আশীর্বাদ: অম্বুবাচীর পর বাড়িঘর গঙ্গাজল ছিটিয়ে পবিত্র করা হয় এবং দেবী কামাখ্যার কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হয়।
- গৃহের দরজায় লাল সুতা বাঁধা: এটি বিবাদ ও ঋণ সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়।
- কুমারী কন্যাকে খাবার খাওয়ানো: কুমারী কন্যাদের খাবার খাওয়ালে শত্রু দমন হয় এবং সৌভাগ্য বৃদ্ধি পায়।
অম্বুবাচী মূলত বিশ্বাস ও আস্থার একটি পর্যায়, যা প্রকৃতির নিয়ম এবং শক্তির আরাধনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।