বিয়ের পর একটি মেয়ের জীবনে শ্বশুরবাড়ির হস্তক্ষেপ, বিশেষ করে শাশুড়ির হস্তক্ষেপ—এটি ভারতীয় সমাজ-সংসারের অতি চেনা ছবি। অনেকে এই সমস্যায় জর্জরিত। তবে এবার দিল্লি হাই কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিতে চলেছে, যা এই চিরকালীন ভারতীয় সংসারধারার ছবিটা বদলে দিতে পারে।
আদালতের মতে, যদি কোনও তৃতীয় পক্ষ কোনও দম্পতির প্রেম বা স্নেহকে ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত স্বামী/স্ত্রীর তাদের বিরুদ্ধে অ্যালেনেশন অফ অ্যাফেকশন (Alienation of Affection বা AoA) মামলা দায়ের করার অধিকার রয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে স্বামী/স্ত্রী তাদের বিবাহে হস্তক্ষেপকারী যে কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন।
‘মাম্মিজি, থোড়া বাঁচ কে রেহনা প্লিজ!’
একজন আইনজীবী একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে এই বিষয়টিকে সামনে এনেছেন এবং ঘুরিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা “মাম্মিজি, থোড়া বাঁচ কে রেহনা প্লিজ” লেখাটি তুলে ধরেছেন। তিনি সতর্ক করেছেন যে, সন্তানের দাম্পত্যের ক্ষতি হতে পারে এমন উত্তেজনা তৈরি করা থেকে শাশুড়িদের বিরত থাকা উচিত। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, যদি কোনও শাশুড়ি তার ছেলে এবং ছেলের বউয়ের মধ্যে, অথবা তার মেয়ে এবং মেয়ের স্বামীর মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে, তবে তাঁকেও কি দায়ী করা যেতে পারে?
‘অ্যালেনেশন অফ অ্যাফেকশন’ (AoA) দাবির মূল দিক
ইনস্টাগ্রামে ওই আইনজীবী ব্যাখ্যা করেছেন যে এই ধরনের দাবি ভারতের বাইরে সাধারণ হলেও, দিল্লি হাই কোর্টের রায়ের পর এটি এখন ভারতেও দেওয়ানি মামলা দায়েরের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
একটি AoA দাবির মূল বিষয়গুলি হলো:
ইচ্ছাকৃত হস্তক্ষেপ প্রমাণ: আদালতে প্রমাণ করতে হবে যে শাশুড়ি বা তৃতীয় পক্ষ বৈবাহিক সম্পর্ক ধ্বংস করার উদ্দেশে কাজ করেছে। তাদের কর্মকাণ্ড এবং বিবাহ ভেঙে যাওয়ার মধ্যে একটি স্পষ্ট যোগসূত্র দেখাতে হবে।
স্নেহ হ্রাস প্রমাণ: শুধু বিবাহে টানাপোড়েন যথেষ্ট নয়। প্রমাণ করতে হবে যে হস্তক্ষেপের আগে দম্পতির মধ্যে প্রকৃত ভালবাসা এবং স্নেহ উপস্থিত ছিল এবং পরবর্তীতে সেটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
কীভাবে AoA মামলা দায়ের করবেন?
এই ধরনের মামলা দায়েরের জন্য একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন। এরপর:
মামলার সমর্থনে প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। এর মধ্যে থাকতে পারে বন্ধু, পরিবার বা পরামর্শদাতাদের সাক্ষীর বক্তব্য।
বিবাহে স্নেহ প্রদর্শনকারী ছবি বা ভিডিও।
শাশুড়ি বা অন্য তৃতীয় পক্ষের নেতিবাচকতা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা দেখানো বার্তা বা রেকর্ড।
প্রমাণ প্রস্তুত হয়ে গেলে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করা যেতে পারে।
আইনজীবীর মতে, এই নতুন আইনের চূড়ান্ত রায় এখনও বিচারাধীন, তবে এটি বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গেম-চেঞ্জিং আইনি হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।