মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন মোবাইলে গেম খেলতে গিয়ে গুরুতর বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় অবশেষে কৃষি মন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো মানিকরাও কোকাটেকে। প্রবল সমালোচনার মুখে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ তাঁকে কৃষি দফতরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। অন্যদিকে, দত্তাত্রেয় ভরণেকে মহারাষ্ট্রের নতুন কৃষি দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারের একটি বৈঠকের পরেই মন্ত্রিসভায় এই রদবদল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। মানিকরাও কোকাটে অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি গোষ্ঠীর একজন সদস্য।
গত মাসে বিধানসভায় অধিবেশন চলাকালীন নিজের আসনে বসে মোবাইলে ‘জঙ্গলি রামি’ খেলার অভিযোগ ওঠে মানিকরাও কোকাটের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ভাইরাল হয়, যা গোটা মহারাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক শোরগোল ফেলে দেয়। এই ভিডিওকে কেন্দ্র করে মহাযুতি সরকারকে একযোগে আক্রমণ শানায় এনসিপি (শরদ পাওয়ার গোষ্ঠী), কংগ্রেস এবং উদ্ধব ঠাকরের শিবিরের মতো বিরোধী দলগুলি। এনসিপি (শরদ পাওয়ার গোষ্ঠী) নেতা রোহিত পাওয়ার এই ভিডিওটি প্রথম পোস্ট করে লেখেন, ‘চরম কৃষি সঙ্কটে ভুগছে মহারাষ্ট্র। প্রতিদিন গড়ে ৮ জন কৃষক আত্মহত্যা করছেন। কিন্তু কৃষিমন্ত্রীর কোনও কাজ নেই। তিনি বিধানসভায় বসে বসে রামি খেলছেন।’ এরপর তিনি কটাক্ষের সুরে যোগ করেন, ‘কৃষকদের খেত থেকেও একটু ঘুরে আসুন মহারাজ।’
এর পরেই বিরোধীরা কৃষিমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তোলে। যদিও মানিকরাও কোকাটে এই অভিযোগ মানতে রাজি হননি। তাঁর দাবি ছিল, ‘ক্যামেরা চালু আছে জেনেও কেউ কখনও রামি খেলে? মোবাইলে হঠাৎ খুলে গিয়েছিল। আমি গেমটা স্কিপ করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কিছুতেই হচ্ছিল না। পুরো ভিডিওটা দেখলেই বিষয়টা বোঝা যাবে। বিরোধীরা তা থেকে একটা ক্লিপ কেটে নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে আক্রমণ করছে।’
শুধু তাই নয়, গত কয়েক মাসে কৃষকদের জন্য সরকারের ফসল বীমা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেও মানিকরাও শিরোনামে এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আজকাল, ভিক্ষুকরাও এক টাকা নেয় না। কিন্তু আমরা কৃষকদের এক টাকার ফসল বীমা দিয়েছি। কিছু মানুষ এই প্রকল্পের অপব্যবহার করেছে।” এই মন্তব্যের জেরেও তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীরা সরব হয়। অবশ্য মানিকরাও এই অভিযোগও অস্বীকার করে বলেন, “সরকার কৃষকদের কাছ থেকে এক টাকা নেয়। সরকার টাকা নেয়। তাহলে ভিক্ষুক কে? সরকার ভিক্ষুক, কৃষক নয়… আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।”
এর আগেও তিনি বলেছিলেন যে, সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের যে অর্থ বিতরণ করা হয়, তা বিয়ের মতো অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। সূত্রের খবর, পরপর বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ মানিকরাও কোকাটের উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। গত মঙ্গলবার তিনি মন্ত্রিসভার প্রত্যেক সদস্যকে সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘যদি এই ধরণের ঘটনা ঘটতে থাকে, তাহলে সরকারের মানহানি হবে। এটাই শেষ সুযোগ, কোনও ধরণের বিতর্কিত পদক্ষেপ আমরা সহ্য করব না।’ এই সতর্কতার পরই মোবাইলে গেম খেলার ভিডিও প্রকাশ্যে আসায় মানিকরাও কোকাটেকে শেষ পর্যন্ত কৃষি মন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতে হলো।