বিটকয়েন ‘চেন মার্কেটিং’র ফাঁদে কোটি টাকা খোয়ালেন শত শত মানুষ, মূল হোতা পলাতক

বিটকয়েন এবং ‘চেন মার্কেটিং’ – ডিজিটাল অর্থনীতির এই দুটি আধুনিক শব্দকে হাতিয়ার করে দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরে গড়ে উঠেছিল এক নতুন প্রতারণা চক্র, যার ফাঁদে পড়ে শত শত সাধারণ মানুষ খোয়ালেন তাদের কষ্টার্জিত অর্থ। কবীর দাস নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, বিটকয়েন কেনার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন। এই ঘটনা শুধু একটি প্রতারণা নয়, বরং ডিজিটাল লেনদেনের নামে কীভাবে সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করে তাদের সঞ্চয় কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, তার এক কদর্য উদাহরণ।

প্রতারণার কৌশল:
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে কবীর দাসের প্রতারণার কৌশল উঠে এসেছে। প্রথমে তিনি পরিচিত কিছু মানুষের কাছে থেকে অল্প টাকা ধার নিয়ে অনলাইনে বিটকয়েন কেনা শুরু করেন। এই বিটকয়েন থেকে লাভ করে, যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন, তাদের তিনি মূল অর্থের দ্বিগুণ ফেরত দিতেন। এই ‘দ্রুত দ্বিগুণ লাভের’ লোভই ছিল তার প্রাথমিক ফাঁদ। এই কৌশলে তার প্রতি মানুষের বিশ্বাস জন্মায়। এরপর তিনি ‘চেন মার্কেটিং’ মডেলের প্রস্তাব দেন – যত বেশি লোককে এই ‘ব্যবসা’-য় যুক্ত করা যাবে, তত বেশি লভ্যাংশ পাওয়া যাবে। এই মিথ্যা প্রলোভনে পড়ে গ্রামের পর গ্রাম থেকে সাধারণ মানুষ, যারা ডিজিটাল মুদ্রা সম্পর্কে তেমন ওয়াকিবহাল নন, তারা তাদের সর্বস্ব বিনিয়োগ করেন।

বিশ্বাসভঙ্গ ও হুমকির পরিনতি:
প্রতারিত এক্রামূল বারিক জানান, কিছুদিন পর যখন লভ্যাংশ বা মূল টাকা ফেরত আসা বন্ধ হয়ে যায়, তখন তারা কবীরকে চাপ দিতে শুরু করেন। তখনই কবীরের আসল রূপ প্রকাশ পায়। তিনি নিজেকে সিবিআই অফিসার পরিচয় দিয়ে টাকা ফেরত চাওয়া মানুষদের গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া শুরু করেন। এই ঘটনা দেখিয়ে দিল, কীভাবে বিশ্বাস এবং লোভের সুযোগ নিয়ে একজন প্রতারক মানুষকে চরম হয়রানি করতে পারে।

ক্ষোভ ও পুলিশের তৎপরতা:
শনিবার প্রতারিতরা একত্রিত হয়ে কবীরের বাড়িতে টাকা চাইতে গেলে দেখতে পান, কবীর ইতিমধ্যেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে তারা কবীরের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। সাধন রায় নামের এক প্রতারিত বলেন, “আমাদের অনেক টাকা চলে গিয়েছে। আমরা টাকা ফেরত চাই।” পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে হরিরামপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রাথমিক প্রমাণ এবং জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ কবীরের ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে। গঙ্গারামপুরের এসডিপিও দীপায়ন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “কিছু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

পুলিশের অনুমান, এই প্রতারণা চক্রে কবীর দাসের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। এই ঘটনা কেবল দক্ষিণ দিনাজপুরে নয়, সারা দেশে ডিজিটাল মুদ্রার নামে চলা বিভিন্ন প্রতারণার বিষয়ে মানুষের মধ্যে নতুন করে সচেতনতা তৈরি করেছে। কিভাবে দ্রুত অর্থ উপার্জনের লোভে পড়ে সাধারণ মানুষ তাদের সঞ্চয় হারাচ্ছেন, এবং কিভাবে এই ধরনের চক্রগুলি প্রযুক্তির আড়ালে কাজ করছে, এই ঘটনাটি তারই এক কদর্য চিত্র তুলে ধরে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ধরনের ডিজিটাল প্রতারণা চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy