মাওবাদী অধ্যুষিত ছত্তিশগড়ের বিজাপুরে ২ অক্টোবর অর্থাৎ বিজয়া দশমীর দিনেই বড়সড় সাফল্য পেল কেন্দ্রীয় বাহিনী। কেন্দ্রের ‘পুনা মার্গম’ (পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ) অভিযানের আওতায় এদিন একসঙ্গে ১০৩ জন মাওবাদী অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করেছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার মাথার দাম ছিল মোট ১ কোটি ৬ লক্ষ টাকারও বেশি, যা নিঃসন্দেহে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক বিরাট জয়।
রাজ্য পুলিশ এবং সিআরপিএফ সূত্রে খবর, সংগঠনের প্রতি আস্থা হারিয়ে এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের প্রতি আকৃষ্ট হয়েই তারা সংঘর্ষের পথ ছেড়ে সমাজের মূলস্রোতে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রেকর্ড সংখ্যক আত্মসমর্পণ: সক্রিয় ক্যাডারদের তালিকা
বিজাপুরের এসপি জিতেন্দ্র যাদব জানিয়েছেন, মাওবাদী অধ্যুষিত ছত্তিশগড়ে এই প্রথম একসঙ্গে এত জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করল। তিনি নিশ্চিত করেন যে, আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে অনেকেই সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিল।
এসপি বলেন, “মোট ১০৩ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের মধ্যে ৪৯ জন সংগঠনের প্রথমসারির সদস্য ছিল এবং তাদের জন্য সরকারের তরফে ১ কোটি ৬ লক্ষ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল।”
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে ছিল:
১ জন ডিভিসিএম (DVCM)
৪ জন পিপিএসএম (PPCM)
৪ জন এসিএম (ACM)
৫ জন এরিয়া কমিটির পার্টি সদস্য
৫ জন মিলিটিয়া কমান্ডার/ডেপুটি কমান্ডার
৪ জন জনতানা সরকার সভাপতি সহ বিভিন্ন স্তরের মোট ১০৩ জন ক্যাডার।
কেন আত্মসমর্পণের হিড়িক? দুর্বল হচ্ছে মাও সংগঠন
ডিআইজি কমল লোচন কাশ্যপের দাবি, মাওবাদীদের আত্মসমর্পণের মূল কারণ হলো এলাকায় একাধিক সরকারি প্রকল্পের বাস্তবায়ন।
তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে:
১. উন্নয়নমূলক কাজ: প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে রাস্তা সম্প্রসারণ, পরিবহনে সুবিধা, জল, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য সরকারি কল্যাণমূলক প্রকল্প সফলভাবে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
২. নিরাপত্তা শিবির: অভ্যন্তরীণ এলাকায় নতুন নিরাপত্তা শিবির গড়ে তোলার ফলে মানুষের মধ্যে আস্থা বেড়েছে।
৩. নেতৃত্বের পতন: সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন শীর্ষ মাওবাদী নেতার মৃত্যু এবং আত্মসমর্পণের কারণে সংগঠন ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এই উন্নয়ন দেখে সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে এবং ফলস্বরূপ তারা সংঘর্ষ ছেড়ে সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ছত্তিশগড়ে ৪১০ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছে, ৪২১ জন গ্রেফতার হয়েছে এবং ১৩৭ জন এনকাউন্টারে মারা গিয়েছে। বিজাপুরের এই সাফল্য মাওবাদী দমনে সরকারের বড়সড় পদক্ষেপ বলেই মনে করা হচ্ছে।