পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল শহরের কাছে অজবনগর গ্রামের প্রায় সাড়ে তিনশো পরিবার গত দেড় মাস ধরে ছাদেই বসবাস করছে। ১৯ জুন থেকে শুরু হওয়া এই বন্যা পরিস্থিতিতে গ্রামের প্রতিটি বাড়ির একতলা জলের তলায়। বাসিন্দারা ত্রিপল দিয়ে ছাউনি তৈরি করে সেখানেই রান্না-খাবার, থাকা-খাওয়ার কাজ চালাচ্ছেন।
গ্রামের গণেশ পোড় দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে তাঁর পরিবারের সঙ্গে ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি জানান, ব্লক প্রশাসন নৌকায় করে খিচুড়ি ও পানীয় জলের পাউচ পৌঁছে দিচ্ছে। অনেকে নিজেদের গ্যাস বা উনুনে ভাতে ভাত রান্না করছেন, তবে সবজির মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়া কঠিন। গণেশ পোড় বলেন, “এই সময়ে সাধারণত ঘাটালে বন্যা হয় না। বন্যা আসে সেপ্টেম্বর বা আগস্টের শেষের দিকে। এখন তো সেপ্টেম্বর মাস অনেক বাকি। এই দেড় মাস যদি ছাদেই কাটাতে হয়, তাহলে কি আরও দেড় মাস থাকতে হবে?”
গণেশবাবুর মতো বিকাশ দোলই, পূর্ণ পোড়, লক্ষ্মণ পোড় এবং গুনধর বড়দোলইরাও একই রকম দুর্দশার শিকার। তাদের সবারই বাড়ির একতলা জলের তলায়। একমাত্র ডিঙি বা ডোঙা ছাড়া তাদের চলাচলের কোনো উপায় নেই।
ঘাটাল ব্লক প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, অজবনগর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অজবনগর পূর্ব, পশ্চিম ও মধ্যপাড়া এবং রথিপুর গ্রামের সবক’টি বাড়ির একতলা জলের নিচে। এছাড়াও হরিদাশপুর, রাধাকান্তপুর, মহারাজপুর, নিমপাতা সহ প্রায় ২২টি বুথের অবস্থা একই। সেই ১৯ জুন থেকে এই মানুষগুলোর অস্থায়ী সংসার ছাদে চলছে।
ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি ও ব্লক তৃণমূল সভাপতি দিলীপ মাঝি জানান, “ঘাটাল ব্লকের ছয়টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা পুরোপুরি জলবন্দি। প্রায় দেড় মাস ধরে ২২টির মতো গ্রামের সব বাড়ির একতলা জলের নিচে। রাস্তাঘাট সব জলমগ্ন। মানুষের কী যে কষ্ট তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।” তিনি আরও বলেন, “এভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে প্রায় তিন মাস জলবন্দি থাকতে হবে ঘাটালের মানুষকে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি।”
বন্যাদুর্গতদের প্রশ্ন, আর কতদিন এই অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হবে?