বাজেট বরাদ্দ থেকে জমি অধিগ্রহণ, উত্তরবঙ্গের অবহেলা নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ফালাকাটার বিধায়ক

উত্তরবঙ্গের প্রতি রাজ্য সরকারের সার্বিক অবহেলা, পরিকাঠামোগত ব্যর্থতা এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্পে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ তুলে বুধবার শিলিগুড়ি জার্নালিস্ট ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন ফালাকাটার বিধায়ক ও দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মন।

বাজেটে বৈষম্যের অভিযোগ:

দীপকবাবু শুরুতেই বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের অভিযোগ তোলেন। তিনি জানান, ভৌগোলিকভাবে উত্তরবঙ্গ রাজ্যের প্রায় ১৮ শতাংশ জমি এবং ১৮ শতাংশ জনসংখ্যা ধারণ করলেও, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে রাজ্যের মোট ৩.৭ লক্ষ কোটি টাকার বাজেটে উত্তরবঙ্গের জন্য বরাদ্দ হয়েছে মাত্র প্রায় ৮৬১ কোটি টাকা (মোট বাজেটের প্রায় ০.২৩%)। তাঁর দাবি, “কলকাতার জন্য যে বরাদ্দ থাকে তার সিকিভাগেরও কম হয় উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে।”

কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাধা ও জমিজট:

তাঁর প্রধান অভিযোগ ছিল, কেন্দ্র যখন উত্তরবঙ্গের জন্য বড় প্রকল্প ঘোষণা করে, তখন রাজ্য সরকার তাতে বাধা সৃষ্টি করে। যেমন, জলপাইগুড়ি থেকে ঘোষপুকুর হয়ে অসম পর্যন্ত যে ফোর-লেন রাস্তা তৈরি হচ্ছে, তা বারবার জমিজটের কারণে আটকে যাচ্ছে। এই জটের কারণ হিসাবে তিনি ডিএম কার্যালয়ের অস্বচ্ছ ক্ষতিপূরণ নির্ধারণকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, “একই দাগের জমিতে একজন মালিক ২ লক্ষ টাকা ডেসিমেল পাচ্ছেন, আরেকজন পাচ্ছেন মাত্র ৫০ হাজার টাকা।” এই বৈষম্যের কারণেই সাধারণ মানুষ জমি দিতে নারাজ হচ্ছেন।

গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অর্থ ব্যয় না হওয়া:

বিধায়ক জানান, উত্তরবঙ্গের জন্য বরাদ্দকৃত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, যেমন—কোচবিহার ও রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজের জন্য ১১৩.৪০ কোটি টাকা, মালদহে ট্রমা সেন্টারের জন্য ১২০ কোটি টাকা এবং শিলিগুড়িতে রিং রোড তৈরির জন্য কেন্দ্রের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার অনুমোদন সত্ত্বেও রাজ্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তার কারণে কাজ সম্পূর্ণ হচ্ছে না। একইভাবে, বাগডোগরা বিমানবন্দরের সম্প্রসারণে রাতের বিমান চলাচলের জন্য আলিপুরদুয়ারের হাসিমারা এয়ারবেসের ৩৭.৭৪ একর জমি দিতে রাজ্য রাজি নয়, ফলে টার্মিনাল তৈরি সম্ভব হচ্ছে না।

ভাঙা সেতু ও সিন্ডিকেট:

দীপক বর্মন দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা সেতুর সমস্যা তুলে ধরে রাজ্যের চরম উদাসীনতার উদাহরণ দেন। তিনি জানান, ১৯৯৩ সালের বন্যায় ভেসে যাওয়া মুজনাই নদীর সেতু ৩২ বছরেও তৈরি হয়নি, এবং ২০ হাজার মানুষ আজও বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন।

সবশেষে তিনি অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরের মূল উদ্দেশ্য বালি-পাথরের সিন্ডিকেটের ওপর নজর রাখা। তিনি বলেন, বোল্ডার ও বালি চোরাচালানে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে, ব্রিজের পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং স্থানীয় থানার ওসি থেকে এসপি পর্যন্ত এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। তিনি দাবি করেন, ডুয়ার্সে হাতির আক্রমণে আহতদের সম্পূর্ণ চিকিৎসার ব্যয়ভার রাজ্য সরকার গ্রহণ করুক।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy