দিল্লি পুলিশের একটি অফিসিয়াল চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশী ভাষা’ হিসেবে উল্লেখ করার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কঠোর অবস্থানের পর এবার তৃণমূল কংগ্রেসের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বিজেপি এবং কেন্দ্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ‘ভয়ঙ্কর যুক্তি’ তুলে ধরা হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, এই ঘটনা বিজেপির ‘হিন্দি আগ্রাসন’ নীতিরই ফল।
রবিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের সিনিয়র নেতা ও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “পাকিস্তান তৈরির পর দেখা গিয়েছিল তাদের নেতারা উর্দু জানতেন না, হিন্দিতে কথা বলতেন। তাহলে যারা হিন্দি ভাষায় কথা বলছেন, তাঁরা কি পাকিস্তানি? পাকিস্তানিরাও তো হিন্দি বলেন। এটা আর কিছু নয়, বিজেপির হিন্দি আগ্রাসন নীতি।” তার এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, ভাষার ভিত্তিতে কোনো সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করা বা অপমান করা ঠিক নয়।
ব্রাত্য বসু আরও যোগ করেন, “আজ দিলীপ কুমার সাহাকে আত্মহত্যা করতে হয়েছে এনআরসির ভয়ে। এটা কেন করতে হবে? বিজেপির বাংলার নেতারা প্রতিবাদ করুন। আপনারাও তো বাংলায় কথা বলেন।” তার এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি এনআরসি-কে ঘিরে মানুষের আতঙ্ক এবং বাংলা ভাষাভাষীদের প্রতি কেন্দ্রের কথিত বৈষম্যের অভিযোগ তুলে ধরেন।
অন্যদিকে, তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এই চিঠিকে “গুরুত্বপূর্ণ” এবং “চরম নিন্দনীয় বিষয়” হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “বাংলা এবং বাঙালিকে নিয়ে প্রতিনিয়ত যা হচ্ছে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। এই চিঠিটিতে দিল্লি পুলিশ লিখছে, বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশী ভাষা। আর তা বলছে কে? বলছে দিল্লি পুলিশ, বলছে বিজেপি বলছে। আমাদের সংবিধানে সব ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।”
কুণাল ঘোষ দিল্লি পুলিশের সংশ্লিষ্ট অফিসারের সাসপেনশন এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, “বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশী ভাষা বলে বাংলাকে অপমান করা হচ্ছে। চক্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার ‘এক্স’ (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেলে এই ঘটনাকে ‘কলঙ্কজনক, অপমানজনক, দেশদ্রোহী, অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়েছিলেন এবং বাংলার মানুষের কাছে এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল যখন দেশজুড়ে ‘ভোটার তালিকা সংশোধন’ (SIR) সহ বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলির জোট ‘ইন্ডিয়া’ সরব হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, এই ঘটনা বিজেপির বাংলা বিরোধী মানসিকতারই প্রতিফলন, যা দেশের ভাষাগত বৈচিত্র্যকে অসম্মান করে বিভাজনের রাজনীতি উসকে দিচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বিতর্ক আগামী দিনে বাংলা এবং বাঙালির ‘অস্মিতা’ ইস্যুকে আরও জোরালো করবে এবং আসন্ন নির্বাচনগুলিতে এর প্রভাব পড়বে।