বাংলা ভাষার প্রতি বিজেপির কথিত আক্রমণের প্রতিবাদে বুধবার ঝাড়গ্রামে এক বিশাল পদযাত্রা ও জনসভার নেতৃত্ব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একলব্য মোড় থেকে শুরু করে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই মিছিলে আদিবাসী, সন্ন্যাসী এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ যোগ দেন। মুখ্যমন্ত্রীর এক হাতে ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এবং অন্য হাতে বিরসা মুন্ডার ছবি, যা বাংলা সংস্কৃতি ও আদিবাসী সমাজের প্রতি তাঁর সংহতির প্রতীক।
মিছিলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী যেমন অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, শিউলি সাহা, মানস ভুঁইয়া এবং ইন্দ্রনীল সেন। মিছিল শেষে ঝাড়গ্রামের পাঁচমাথার মোড়ে এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষার পাশাপাশি এনআরসি, বাঙালি হেনস্থা-সহ একাধিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন।
এনআরসি ইস্যুতে অমিত শাহকে আক্রমণ:
অসম সরকারের পক্ষ থেকে বাংলার অনেককেই নোটিস পাঠানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানান। তিনি বলেন, “অমিত শাহ আগে জন্মের শংসাপত্র দেখান।” মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, বাংলা থেকে এনআরসি করতে দেওয়া হবে না। তিনি দাবি করেন, পুরনো নথির দোহাই দিয়ে কোনো ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া চলবে না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এসআইআরের (State Identity Register) নেপথ্যে এনআরসি। ভয়ে মানুষ আত্মহত্যা করছেন। কিন্তু কেউ ভয় পাবেন না। মানুষের অধিকার কাড়তে দেব না। বিজেপির চালাকি মানুষ বুঝে গিয়েছে। এনআরসি হচ্ছে না, হবেও না।”
মুখ্যমন্ত্রীর গান ও প্রতিবাদ:
এই প্রতিবাদ কর্মসূচির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই একটি গান লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন। গানটি গেয়েছেন ইন্দ্রনীল সেন। গানের কথায় বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে অপমানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অঙ্গীকার ফুটে উঠেছে। মিছিল শেষে সেই গান বাজানো হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহলের প্রাণকেন্দ্র ঝাড়গ্রামে এই কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। বিজেপি বিরোধী এই প্রতিবাদ মিছিলে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এবং সামাজিক সংগঠনগুলিও অংশ নিয়েছিল, যা মুখ্যমন্ত্রীর আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করেছে।