বাংলার ঐতিহ্য সংকটে, ২৮টি ঐতিহাসিক স্থাপত্যে বেআইনি নির্মাণ, ৫টি বেদখল, নীরব রাজ্য সরকার!

পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলি এখন বেআইনি নির্মাণ ও দখলদারির কবলে পড়ে চরম সংকটে। রাজ্যসভা সাংসদ এবং নবনির্বাচিত রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের প্রশ্নের জবাবে আজ ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (ASI) এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে। জানা গেছে, এএসআই রায়গঞ্জ সার্কেলের আওতাধীন ৫২টি ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপত্যের মধ্যে ২৮টিতেই বেআইনি নির্মাণ এবং আরও ৫টি বর্তমানে দখলদারদের হাতে।

শমীক ভট্টাচার্য সংসদে মোট চারটি প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, এএসআই রায়গঞ্জ সার্কেলের আওতায় কতগুলি ঐতিহাসিক স্থাপত্য রয়েছে, তাদের মধ্যে কতগুলি বেদখল বা বেআইনি নির্মাণের শিকার, এবং এই নিয়ে এএসআই ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা।

দখলদারদের ‘রাজ’: কোচবিহার রাজপ্রাসাদ থেকে হাজারদুয়ারি পর্যন্ত
এএসআই-এর উত্তরে জানানো হয়েছে, রাজ্যে এএসআই রায়গঞ্জ সার্কেলে মোট ৫২টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও কেন্দ্র রয়েছে, যার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের। তবে এই ৫২টি ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপত্যের মধ্যে ২৮টিতেই বেআইনি নির্মাণকাজের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও, আরও পাঁচটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে দখলদারির কবলে রয়েছে। এএসআই এই সংক্রান্ত একটি তালিকাও দিয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, কোচবিহারের রাজপ্রাসাদ থেকে শুরু করে হাজারদুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থানে বেআইনি নির্মাণকারী ও দখলদারদের ‘রাজত্ব’ চলছে।

এএসআই-এর পদক্ষেপ, রাজ্য সরকারের নীরবতা
এএসআই জানিয়েছে যে তারা এই অবৈধ কাজ রুখতে সক্রিয়। বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করার জন্য বারংবার ‘স্টপ’ নোটিস জারি করা হয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। এমনকি, পুলিশেও এএসআই দ্বারস্থ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কেন্দ্র সরকারও এই বিষয়ে রাজ্য সরকারকে অবগত করেছে।

তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, এই গুরুতর বিষয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? এএসআই-এর উত্তরে এই বিষয়ে কোনো স্পষ্ট তথ্য মেলেনি। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাংলার ঐতিহ্য ও ইতিহাস বহনকারী এই স্থাপত্যগুলির এমন বেহাল দশা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এএসআই-এর পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, রাজ্য সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এই দখলদারি ও বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করা কঠিন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের ঐতিহাসিক সম্পদ রক্ষায় রাজ্য সরকার কী ভূমিকা নেয়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy