বাংলায় SIR-কেন প্রয়োজন?-দেশভাগের ইতিহাস সামনে রেখে বোঝাবে বিজেপি

আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলার রাজনীতিতে ‘ভোটার তালিকা সংশোধন’ একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই বিতর্ককে নিজেদের পক্ষে আনতে বঙ্গ-বিজেপি এবার ‘দেশভাগের যন্ত্রণা’কে হাতিয়ার করতে চলেছে। গেরুয়া শিবির প্রতিটি জেলায় সেমিনার আয়োজন করে ব্যাখ্যা করবে যে, দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে থাকা হিন্দু বাঙালিদের কী পরিমাণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল, এবং সেই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন তুলবে যে, যাদের কারণে এই দুর্ভোগ, তাদের কি ভারতের ভোটার তালিকায় নাম থাকা উচিত?

বৃহস্পতিবারও বিজেপির শীর্ষ নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং শমীক ভট্টাচার্য স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, রাজ্যের ভোটার তালিকা থেকে বাংলাদেশি মুসলমান এবং রোহিঙ্গাদের বাদ দিতেই হবে। এই দাবিকে ‘একশো শতাংশ যুক্তিযুক্ত’ প্রমাণ করতে বিজেপি ‘দেশভাগের যন্ত্রণা’র কথা স্মরণ করিয়ে মানুষের সমর্থন আদায় করতে চাইছে।

‘দেশভাগের যন্ত্রণা’র পুনরাবৃত্তি:

বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তাদের পূর্বসূরীরা দেশভাগের বিরুদ্ধে ছিলেন এবং অখণ্ড ভারতের পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন। ইতিহাসের এই অধ্যায়কে স্মরণে রেখে গত বছরও ১৪ই আগস্ট গেরুয়া শিবিরের নেতা-নেত্রীরা ‘দেশভাগের যন্ত্রণা’র কথা স্মরণ করানোর চেষ্টা করেছিলেন। এ বছর এই কর্মসূচির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করছেন বিজেপির অনেকে, কারণ আর বছর ঘুরলেই বাংলায় বিধানসভা ভোট এবং ভোটার তালিকা ঝাড়াই-বাছাই নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দামামা বেজে উঠেছে।

বিজেপির দাবি, এ রাজ্যের ভোটার তালিকায় বাংলাদেশি মুসলমান এবং রোহিঙ্গাদের নাম অবৈধভাবে তোলা হয়েছে। এর পাল্টা হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে আসলে ঘুরিয়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার রাজ্যে এনআরসি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জি) চালু করতে চাইছে।

বিজেপির কৌশল ও বার্তা:

এই তরজায় এগিয়ে থাকতে পদ্ম-ব্রিগেড পুনরায় রাজ্যের মানুষকে দেশভাগের যন্ত্রণার স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে চাইছে। এক বিজেপি নেতার কথায়, “দেশভাগের পরে যাদের জন্য হিন্দু বাঙালিদের সাত পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে আসতে হয়েছিল, তারাই বাংলাদেশ থেকে এসে এ রাজ্যের ভোটার তালিকায় বেআইনিভাবে নাম তুলেছে। তাদের নামগুলি ভোটার তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলার কথাই আমরা বলছি। এতে ভারতীয় হিন্দু, মুসলমান—সবার সমর্থন থাকবে। এ বছর ১৪ই আগস্ট বিভিন্ন জেলায় দেশভাগের যন্ত্রণা নিয়ে সেমিনার হবে।”

তবে বিজেপির লক্ষ্য যে শুধু বাংলাদেশি মুসলমানরাই, ভারতীয় মুসলমানরা নন – তা বৃহস্পতিবার আরও একবার স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর কথায়, “ভারতীয় মুসলমানদের কোনো চিন্তা নেই। স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (সার)–এর আঁচ তাদের গায়ে লাগবে না। এ রাজ্যের শিক্ষিত মুসলমানরা অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে। তাঁরাও (অনুপ্রবেশকারীরা) ভোট দিতে পারেন না।”

এই কৌশলগত পদক্ষেপ বাংলার রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলে, এবং ভোটার তালিকা সংশোধনের এই দাবি আসন্ন নির্বাচনে কতটা গুরুত্ব পায়, তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy