“বাংলায় অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে…?”-দুর্গাপুর থেকে বাঙালির সম্মান রক্ষায় মোদীর হুঁশিয়ারি

পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক বাগ্যুদ্ধ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। আজ দুর্গাপুরের জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিলেন এবং একইসাথে “বাঙালি অস্মিতা” নিয়ে তৃণমূলের অভিযোগের জবাব দিলেন। তাঁর বক্তব্যে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘এক দেশ, এক সংবিধান’ নীতির পুনরুল্লেখ করে বিজেপি’র জাতীয়তাবাদী অবস্থানকে তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন, “দুর্গাপুরের মাটি থেকে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, যারা ভারতের নাগরিক নয়, যারা অবৈধ ভাবে এই দেশে প্রবেশ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ভারতের সংবিধান অনুসারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া অব্যাহত থাকবে।” এই কঠোর বার্তা সরাসরি তৃণমূলের সেই অভিযোগের পাল্টা, যেখানে তারা দাবি করেছে যে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালি শ্রমিকদের “বাংলাদেশি” সন্দেহে হেনস্থা করা হচ্ছে এবং আটক করা হচ্ছে। সম্প্রতি দিল্লিতে ‘জয় হিন্দ’ কলোনির বাসিন্দাদের “বাংলাদেশি” তকমা দিয়ে ভিটেছাড়া করা এবং কোচবিহারের এক ব্যক্তিকে অসমের ফরেনার্স ট্রাইবুনাল কর্তৃক “বাংলাদেশি” চিহ্নিত করার মতো ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ১৪ জুলাই কলকাতায় মিছিল ও সভা করেছিলেন।

তবে, প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেন। তিনি দাবি করেন যে, বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলা ভাষা এবং পশ্চিমবঙ্গের জনগণকে “সর্বোচ্চ সম্মান” দেওয়া হয়। মোদী জোর দিয়ে বলেন, “বিজেপির জন্য, বাংলা ভাষা অনুপ্রেরণা, ঐতিহ্য এবং পরিচয়ের প্রতীক। বিজেপির জন্য বাঙালি গর্ব অগ্রাধিকারের বিষয়।” এর মাধ্যমে তিনি বাঙালি পরিচয়ের প্রশ্নে বিজেপির অবস্থানকে দৃঢ় করার চেষ্টা করেন।

উল্টো দিকে, প্রধানমন্ত্রী মোদী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের পরিচয়কে বিপন্ন করার অভিযোগ তোলেন। এই প্রসঙ্গে তিনি অনুপ্রবেশের সমস্যার কথা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেন। মোদী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে কী ঘটছে? তৃণমূল কংগ্রেস, তাদের স্বার্থ রক্ষায় পশ্চিমবঙ্গের পরিচয়কেও ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এর জন্য এখানে অনুপ্রবেশকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। অনুপ্রবেশকারীদের জাল নথি তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। এর একটা পুরো ইকো সিস্টেম তৈরি করে ফেলা হয়েছে। এটা পশ্চিমবঙ্গ এবং গোটা দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপদ। এটা বাংলার সংস্কৃতির জন্য বিপদ। কিন্তু তুষ্টিকরণের রাজনীতির জন্য TMC সব সীমা পার করেছে।”

প্রধানমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন যে, দেশের সামনে তৃণমূলের এই “কারসাজি” ফাঁস হয়ে যাওয়ার ফলে তারা এখন “অনুপ্রবেশকারীদের পক্ষে প্রকাশ্যেই নতুন আন্দোলন শুরু করেছে”। তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে দেশের সাংবিধানিক সংস্থাগুলিকে “হুমকি দেওয়ার” অভিযোগও করেন।

সবশেষে, প্রধানমন্ত্রী এই পরিস্থিতিকে “বাংলার অস্মিতার বিরুদ্ধে হওয়া ষড়যন্ত্র” বলে দাবি করেন এবং দৃঢ়তার সাথে জানান যে বিজেপি এই ধরনের কোনও ষড়যন্ত্রকে সফল হতে দেবে না। তাঁর চূড়ান্ত বার্তা ছিল, “এটা আপনাদের মোদীর গ্যারান্টি।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই জোরালো বক্তব্য আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটারদের মধ্যে একটি স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা। জাতীয় নিরাপত্তা, বাঙালি পরিচয় এবং আইনশৃঙ্খলার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে তুলে ধরে বিজেপি তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy