বাংলাদেশে ক্ষমতায় কে? বিএনপি-কে টপকে জামাতের উত্থান, সমীক্ষায় বড় চমক!

২০২৪ সালের অগাস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তা দ্রুত পূরণ করার চেষ্টা করেছিল প্রধান বিরোধী দল বিএনপি (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি)। তবে সময় যত গড়িয়েছে, পরিস্থিতি তত বদলেছে। বিএনপি-র উত্থান কিছুটা ফিকে হতেই সামনে চলে এসেছে একদা নিষিদ্ধ কট্টরপন্থী সংগঠন জামাত-ই-ইসলামি। শেখ হাসিনার আমলে জামাতকে জঙ্গি সংগঠনের তকমা দিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে ইউনূস কেয়ারটেকার সরকার ক্ষমতায় বসেই জামাতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং তাদের রাজনৈতিক সক্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করে।

জরিপে জামাত ও বিএনপি-র টক্কর
২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে জামাত-ই-ইসলামি যথেষ্ট সক্রিয় এবং তারা বিএনপি-কে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট-এর একটি সার্ভেতে এই প্রতিযোগিতা স্পষ্ট হয়েছে।

বিএনপি: ৩৩ শতাংশ মানুষ ক্ষমতা দেখতে চায়।

জামাত-ই-ইসলামি: ২৯ শতাংশ মানুষের পছন্দে রয়েছে।

এনসিপি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি (এনসিপি)-কে ক্ষমতায় চায় মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ।

গত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে করা এই জরিপ ইঙ্গিত দিচ্ছে, বাংলাদেশে কট্টরপন্থী জামাতের সংগঠন এখন বিএনপি-র চেয়েও বেশি মজবুত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভোটে জামাতের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের জয়ও এই উত্থানেরই ইঙ্গিত বহন করছে।

জামাতের কৌশল: হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক টার্গেট
জামাত এখন কিছুটা ভোল বদলে আওয়ামী লিগের ভোটব্যাঙ্ককেও টার্গেট করেছে। এমনকি সংখ্যালঘু হিন্দুদেরও আস্থা জোগাড়ের চেষ্টা করছে। জামাত সদস্যরা গ্রামেগঞ্জে মানুষদের বোঝাচ্ছে, তারা ক্ষমতায় এলে হিন্দুরা যাতে বাংলাদেশে শান্তিতে বাস করতে পারে, তা নিশ্চিত করবে। কিন্তু পাকিস্তানপন্থী এই গোষ্ঠীকে বিশ্বাস করতে পারছে না হিন্দু সহ সংখ্যালঘুরা। আবার ২০০১-২০০৬ সালের বিএনপি-জামাত জোটের সময়কার অত্যাচারের স্মৃতিও অনেকের মনে তাজা। ফলে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক উভয় দিকেই বিপদের মুখে।

জামাতের উত্থান কেন ভারতের জন্য উদ্বেগের?
শেখ হাসিনার সরকারের শেষদিকে বাংলাদেশে দ্রুত ভারত-বিরোধী হাওয়া উঠতে শুরু করেছিল। জামাত-ই-ইসলামি বরাবরই পাকিস্তানপন্থী এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তারা পাকিস্তানি সেনাকে সাহায্য করেছিল। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় থাকার সময় বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে ভারতবিরোধী উগ্রবাদী শক্তির নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।

দিল্লি এখন বাংলাদেশের গতিবিধির উপর সতর্ক নজর রাখছে। নয়াদিল্লি কূটনৈতিকভাবে জানিয়েছে, যে দলই ক্ষমতায় আসুক, ভারত ঐতিহাসিক সম্পর্ক বজায় রাখবে। তবে ইতিহাস বলছে, জামাত ই ইসলামের ক্ষমতায় ফেরা মানেই সীমান্তে অস্থিরতা, জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেওয়া এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে সংঘাত বাড়ার ঝুঁকি। লতিফুজ্জামান বাবরের মতো অভিযুক্তরা হাসিনা সরকারের পতনের পরেই জামিনে মুক্তি পাওয়ায় এই উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy