পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার বাঁশকোপা টোলপ্লাজায় ঘটে গেল এক মর্মান্তিক ও শিউরে ওঠা সড়ক দুর্ঘটনা। শনিবার ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে টোল ট্যাক্স দেওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি লরির পিছনে প্রচণ্ড গতিতে ধাক্কা মারে একটি বিলাসবহুল গাড়ি। এই ভয়াবহ সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে গাড়িতে থাকা দুই ব্যক্তির, যাঁদের মধ্যে একজন একটি বেসরকারি সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া আরও একজন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি কলকাতা থেকে আসানসোলের দিকে যাচ্ছিল। দুর্গাপুরের মুচিপাড়ায় একটি জরুরি ব্যবসায়িক বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা ছিল গাড়িতে থাকা উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে বাঁশকোপা টোলপ্লাজার লেন-এ দাঁড়িয়ে ছিল একটি মালবোঝাই লরি। সেই সময় পিছন থেকে আসা গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সজোরে লরিটির পিছনে ধাক্কা মারে। সংঘর্ষের অভিঘাত এতটাই তীব্র ছিল যে, গাড়িটির সামনের অংশ লরির তলায় প্রায় ৫-৬ ফুট ঢুকে যায় এবং কার্যত লোহার দলায় পরিণত হয়।
ঘটনাস্থলেই গাড়ির চালক এবং তাঁর পাশে বসে থাকা আরোহীর মৃত্যু হয়। মৃত আরোহীর নাম গৌতম জানা (৫০), যিনি একটি বেসরকারি সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন। পিছনের আসনে থাকা অন্য এক ব্যক্তি, তিনিও সমপদমর্যাদার আধিকারিক, গুরুতর আহত হন। পুলিশ জানায়, মৃতদেহগুলি এমনভাবে আটকে গিয়েছিল যে তা উদ্ধার করতে দীর্ঘ সময় লাগে। আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার সময় টোলপ্লাজার কাছেই উপস্থিত ছিলেন ওই সংস্থার এক কর্মী অরুণাভ মণ্ডল। তিনি জানান, “ওঁরা কলকাতা থেকে মিটিংয়ের জন্য আসছিলেন। আমি এখানে ওঁদের রিসিভ করতে এসেছিলাম। ফোনে কথা হওয়ার কিছুক্ষণ পরই শুনি এই সর্বনাশা খবর।”
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশের এসিপি (ট্রাফিক) রাজকুমার মালাকার জানিয়েছেন, “টোলপ্লাজার সামনে সাধারণত গাড়ির গতি কম থাকে, কিন্তু এই গাড়িটির গতি ছিল অস্বাভাবিক। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, চালক ভুলবশত ব্রেকের বদলে এক্সিলারেটরে চাপ দিয়েছিলেন, যার ফলে গাড়িটি গোলার মতো লরিকে ধাক্কা মারে।” ঘাতক লরি ও দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটিকে পুলিশ আটক করেছে। এই ঘটনার জেরে জাতীয় সড়কে কিছুক্ষণ যান চলাচল ব্যাহত হলেও পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।