বাঁকুড়ার বৃদ্ধ গরু ব্যবসায়ীর উপর অকথ্য নির্যাতন, বিজেপি যুবনেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজ্যজুড়ে নিন্দার ঝড়

বাঁকুড়ার আশুরিয়া গরুর হাটে এক অশীতিপর বৃদ্ধ গরু ব্যবসায়ীকে ‘গরুচোর’ তকমা দিয়ে ঘাড় ধরে ঘোরানো এবং কান ধরে ওঠবোস করানোর অভিযোগ উঠেছে বিজেপির যুবনেতা পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। এই অমানবিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যজুড়ে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। তৃণমূল কংগ্রেস দুর্গাপুরের কোকওভেন থানায় পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায় ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছে। এর জেরে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে দু’জনকে গ্রেফতার করা হলেও, মূল অভিযুক্ত পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায় এখনও অধরা।

শুক্রবার রাতে দুর্গাপুর থানায় পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায় সহ সকল অভিযুক্তের গ্রেফতারের দাবিতে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পুলিশি তৎপরতায় শুক্রবার রাতেই দুর্গাপুরের মহানন্দা পল্লী থেকে দীপক দাস এবং আড়া বিধান পার্ক থেকে অনিস ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার ধৃতদের দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়েছে। তবে, বিজেপির যুব মোর্চার নেতা পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায় সহ বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে এখনও তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।

ঘটনার সূত্রপাত ও অভিযোগ:
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে বাঁকুড়ার বড়জোড়ার আশুরিয়া হাট থেকে একটি পিক-আপ ভ্যানে করে গরু নিয়ে দুর্গাপুরের গ্যামন ব্রিজ হয়ে জেমুয়া এলাকায় যাচ্ছিলেন ওই বৃদ্ধ ব্যবসায়ী। অভিযোগ, গ্যামন ব্রিজ এলাকায় বিজেপির যুবনেতা পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একদল বিজেপি কর্মী-সমর্থক ওই গরুবোঝাই গাড়িটিকে আটকায়। এরপর গাড়ির চালককে ঘাড় ধরে নামিয়ে গাড়িতে থাকা বেশ কয়েকজনকে হাতে দড়ি বেঁধে মারধর করা হয়। গরুগুলির পায়ের বাঁধন খুলে দেওয়া হয় এবং তাদের কাছে থাকা সমস্ত টাকা কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

রাজনৈতিক চাপানউতোর ও ন্যায়বিচারের দাবি:
আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় ধৃতদের একজন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ঘটনাস্থলে না থাকার কথা বলেন। অন্য একজন অবশ্য বলেন, “বিজেপি কর্মীদের এভাবে রুখে দেওয়া যাবে না। আমরা গরু চুরির বিরুদ্ধে কথা বলেছিলাম।” যদিও পুলিশ এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা তৃণমূল সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী প্রশ্ন তোলেন, “বাংলায় এরকম অত্যাচার কেন?”

দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জীব দে বিক্ষোভকারীদের আশ্বাস দিয়েছেন যে, অভিযুক্ত কাউকে ছাড়া হবে না এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ দেখায় সাধারণ মানুষ, যদিও পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। বিশিষ্ট আইনজীবী আইয়ুব আনসারী বলেন, “গরু পাচারের মিথ্যা অভিযোগ তুলে কয়েকজন দরিদ্র কৃষিজীবী মানুষের উপর যে অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা দেখে শহর দুর্গাপুর সহ রাজ্যের জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ শিহরিত। আমাদের একটাই আবেদন – দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।” এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে এবং অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তির দাবি উঠেছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy