উপর্যুপরী নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টির জেরে বাঁকুড়ার পাত্রসায়র ব্লকের বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাংপাড়া গ্রামে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। রবিবার সকালে মাটির বাড়ির দেওয়াল ধসে পড়ে তিন বছর বয়সী এক শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে, যেখানে শাসক ও বিরোধী দল একে অপরের উপর দায় চাপাচ্ছে।
চলতি বছর বর্ষার শুরু থেকেই নিম্নচাপের প্রভাবে বাঁকুড়া জেলার বহু কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি সপ্তাহে লাগাতার বৃষ্টির কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়েছে, এবং এই বৃষ্টিতেই একটি কাঁচা মাটির বাড়ির দেওয়াল ধসে কিরণ লোহার নামের তিন বছরের শিশুকন্যাটির মৃত্যু হয়।
জানা গেছে, এদিন সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কিরণ তার বাড়ির সামনে অপর একটি শিশুর সঙ্গে খেলা করছিল। তখনই আচমকাই বাড়ির একটি দেওয়াল তার উপর ধসে পড়ে। পরিবারের লোকজন দ্রুত শিশুটিকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পাত্রসায়র ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা কিরণকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পরিবারের অভিযোগ ও আবাস যোজনা প্রসঙ্গ:
এই ঘটনায় মৃত শিশুর পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন যে, তারা আবাস যোজনায় পাকা বাড়ির জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন, কিন্তু তাদের নাম তালিকায় আসেনি। তারা অভিযোগ করেন, কেন্দ্র ও রাজ্য, কোনো সরকারের আবাস যোজনাতেই তারা বাড়ি পাননি। তাদের আক্ষেপ, আজ যদি একটি পাকা বাড়ি থাকত, তাহলে তাদের কোলের শিশুটিকে এভাবে অকালে প্রাণ হারাতে হতো না।
রাজনৈতিক চাপানউতোর:
দেওয়াল চাপা পড়ে শিশুমৃত্যুর ঘটনা সামনে আসতেই তৃণমূল ও বিজেপি একে অপরের উপর দায় চাপাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তৃণমূলের বিষ্ণুপুর জেলার সভাপতি সুব্রত দত্ত বলেন, “নরেন্দ্র মোদির সরকার আবাস যোজনায় তালিকাভুক্তদের নাম কেটে বাদ দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে টাকা দেননি। আজ যদি ঠিক সময়ে আবাস যোজনার টাকা বাড়িতে পৌঁছে দিতেন তাহলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না। এই ঘটনায় শিশুটির পরিবারকে সমবেদনা জানানো ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে পাঠিয়েছেন। আমরা সর্বতোভাবে ওনাদের পাশে আছি।”
এই বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন সোনামুখী’র বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামী। তার কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন কেন্দ্রীয় সরকার কিছু না দিলে আমরা দেব মানুষকে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য আছি। আর যখনই দেওয়াল চাপা পড়ে মানুষ মারা যাচ্ছে তখন ওনারা বলছেন কেন্দ্রীয় সরকার দিচ্ছে না। ওনারা নাকি ১০০ শতাংশ পশ্চিমবাংলার মানুষের পাশে আছেন। তাহলে মানুষ মারা যাচ্ছে কী করে? যে এলাকায় শিশুটি মারা গিয়েছে সেখানে তৃণমূলের নেতারা একাধিক বাড়ি নিয়েছে। গরিব মানুষদের নাম কেটে নেতা ও বড়লোকদের বাড়ি দিয়েছে তৃণমূল। তার জন্য গরিব মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। তাই আজ অকালে একটি শিশুর প্রাণ চলে গেল। এর জন্য ওরা দায়ী।”
এই মর্মান্তিক ঘটনায় রাজনীতি শুরু হলেও, মূল সমস্যা হল গ্রামীণ এলাকার দুর্বল আবাসন ব্যবস্থা এবং সরকারি প্রকল্পের সুবিধা প্রকৃত অভাবী মানুষের কাছে পৌঁছানোর বিষয়টি। এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, এখন সেটাই দেখার।