বন্যা পরিস্থিতিতে DVC কে তীব্র আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রীর, বাংলা-বিরোধী ষড়যন্ত্র দেখছেন মমতা

রাজ্যের একাধিক জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির জন্য ফের দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)-কে একহাত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তিনি অভিযোগ করেন যে, কেন্দ্রীয় সংস্থা ডিভিসি তাদের জলাধার থেকে অস্বাভাবিক হারে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁর দাবি, ২০২৩ সালের বর্ষার তুলনায় এ বছর জল ছাড়ার পরিমাণ প্রায় ৩০ গুণ বেড়েছে, যা ডিভিসির বিগত বছরের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে। মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত প্রচেষ্টা’ এবং ‘ম্যান-মেড বিপর্যয়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন, যার পেছনে তিনি ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ দেখছেন।

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর এক্স (আগের টুইটার) পোস্টে লেখেন, “DVC-র ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ’ আবারও বাংলাকে ‘ডুবিয়ে’ দিয়েছে। DVC-র এবারের ব্যর্থতা শুধু অন্যান্যবারের থেকে বেশিই নয়, অভূতপূর্ব। স্পষ্টতই, কেন্দ্রের দ্বারা পরিচালিত এই সংস্থাটি ক্রমশ আরও বেশি বেশি করে বাংলা-বিরোধী হয়ে উঠছে। সারা ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার যে বাংলা-বিরোধী পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে, তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এই পরিস্থিতিকে দেখতে হবে। ২০২৪ সালের তুলনায় এ বছর DVC-র জল ছাড়ার পরিমাণ ১১ গুণ বেড়েছে, ২০২৩ সালের তুলনায় বেড়েছে ৩০ গুণ!! দক্ষিণবঙ্গে বন্যা ঘটানোর জন্য এটি একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। এটি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বাংলাকে বিপদে ফেলার জন্য এটা আরও বেশি বেশি করে ঘটাতে থাকা ম্যান-মেড বিপর্যয়।”

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দাবির সমর্থনে ডিভিসির বিগত বছরের জল ছাড়ার পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন। তিনি উল্লেখ করেন: “তথ্যই সব বলে দিচ্ছে: ২০২৪ সালের জুন ও জুলাই মাসে DVC থেকে জল ছাড়া হয়েছে: ৪,৫৩৫ লক্ষ কিউবিক মিটার, ২০২৫ সালের জুন ও জুলাই মাসে DVC থেকে জল ছাড়া হয়েছে: ৫০,২৮৭ লক্ষ কিউবিক মিটার।” তিনি আরও বলেন, “এই বছর এই বিপুল ও নজিরবিহীন পরিমাণ জল ছাড়ার ফলে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা বিধ্বস্ত হয়েছে, বিপুল ফসল নষ্ট হয়েছে, প্রচুর বাঁধ ভেঙেছে, অসংখ্য রাস্তা ভেঙেছে এবং হাজার হাজার মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে – তাদের জীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। বাংলায় বন্যা ঘটানোর জন্য জল ছাড়ার পরিমাণ যেভাবে ক্রমাগত বাড়ছে, তা অত্যন্ত মর্মান্তিক ও উদ্বেগজনক। এর মধ্যে আমি স্পষ্টই গভীর ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছি!”

এটি তিন সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার যখন মুখ্যমন্ত্রী ডিভিসির বিরুদ্ধে সরব হলেন। গত ১৫ জুলাই, রাজ্যের কিছু অংশে বন্যা পরিস্থিতির জন্য নবান্নে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, “ডিভিসির কর্মকাণ্ডের ফলে আমাদের রাজ্য যে পরিণতি ভোগ করছে তার পরোয়া না করেই নিজেদের বাঁচাতে ব্যাপক পরিমাণে জল ছেড়ে দিচ্ছে। আমরা গত ১৪ বছর ধরে এই বিপদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছি, কোনো ইতিবাচক ফলাফল পাইনি।”

গত দুই মাস ধরে নদী উপচে পড়া এবং ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি এবং হাওড়া-সহ একাধিক উল্লেখযোগ্য অংশ বন্যার কবলে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এর আগেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং ডিভিসির আওতাধীন নদী ও খাল খননের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “যদি সঠিকভাবে খনন করা হয়, তাহলে নদীগুলি অতিরিক্ত চার লক্ষ ঘনমিটার জল ধারণ করতে পারে।”

মুখ্যমন্ত্রীর এই কড়া অবস্থান এবং ‘ষড়যন্ত্রে’র অভিযোগ কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কে নতুন করে টানাপোড়েন সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy