হঠাৎ করে বাঁকুড়ার জয়পুরের বৈতল-উত্তর বাড় গ্রামে এলে মনে হতে পারে যেন একদল মানুষ রেগে গিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি করছেন, অথবা নদীর জল উপচে বন্যা হয়েছে। কিন্তু আদতে এটি একটি অসম্ভব মৌলিক ও ঐতিহাসিক খেলা। বিজয়া দশমীর দিনে প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন এই ‘কাদা খেলা’-য় মেতে ওঠেন জয়পুরের মানুষজন।
বৈতল-উত্তর বাড় গ্রামে অবস্থিত দুর্গারূপী মা ঝগড়াই ভঞ্জনী দেবীর মন্দির চত্ত্বরে এই খেলাকে ঘিরে এলাকার ৮ থেকে ৮০ বছর বয়সী নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়।
কেন এই কাদা খেলা?
এই খেলার নেপথ্যে রয়েছে এক গভীর ইতিহাস ও জনশ্রুতি।
মল্লরাজার সূচনা: জনশ্রুতি অনুসারে, বিষ্ণুপুরের মল্লরাজা রঘুনাথ মল্ল একসময় বৈতল গ্রামের পথ দিয়ে যুদ্ধ বা মামলার কাজে যাওয়ার সময় এক বিশেষ দৈব কারণে এখানে মন্দির তৈরি করেন এবং বিজয়া দশমীতে মন্দির চত্বরে কাদা খেলার সূচনা করেন।
সৌভাগ্যের প্রতীক: স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই কাদা খেলায় অংশ নেওয়া অতীব সৌভাগ্যের। যাঁরা এই খেলায় অংশগ্রহণ করেন, তাঁদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় এবং সারা বছর মঙ্গল থাকে—এমনটাই মনে করেন এই অঞ্চলের মানুষজন।
বাঁকুড়ার আনাচে-কানাচে মুড়ি মেলা বা অতিকায় জিলিপির মতো বহু মৌলিক উৎসব লুকিয়ে থাকলেও, এই কাদা ছোড়াছুড়ি খেলা তার নিজস্বতায় সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে। এটি এমন এক লোক-উৎসব, যা বাংলার আর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না।