তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবার খোলাখুলি প্রকাশ্যে চলে এল। লোকসভার প্রাক্তন মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রর মধ্যেকার বিবাদ রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি, একটি পুরোনো ভিডিও পোস্ট করে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহুয়া মৈত্রকে সমর্থন করার জন্য ‘অনুশোচনা’ প্রকাশ করেছেন এবং জাতির কাছে ‘ক্ষমা’ চেয়েছেন।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পোস্টে লিখেছেন, “মহুয়া মৈত্র যখন সংকটে ছিলেন, তখন আমি বিশ্বাস থেকে তাঁকে সমর্থন করেছিলাম। আর আজ সেই মহুয়া আমাকেই ‘নারীবিদ্বেষী’ বলছেন। একজন অকৃতজ্ঞ মানুষকে সমর্থন করে আমি অনুতপ্ত। মানুষ এর বিচার করুক।”
কল্যাণের এই পোস্টটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন তিনি লোকসভায় তৃণমূলের চিফ হুইপের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। দলের সাংসদদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসন্তোষের পরই তিনি এই পদক্ষেপ নেন। এরপর কাকলি ঘোষ দস্তিদার নতুন চিফ হুইপ নিযুক্ত হলে মহুয়া তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেন, যা অনেকে কল্যাণের প্রতি এক ধরনের ‘রাজনৈতিক অবহেলা’ হিসেবেই দেখছেন।
বিতর্কের সূত্রপাত মহুয়া মৈত্রর একটি সাম্প্রতিক পডকাস্ট মন্তব্য থেকে। সেখানে তিনি বলেন, “শূয়োরের সঙ্গে কুস্তি হয় না। কারণ, ওরা মজা পায় আর তুমি নোংরা হও। ভারতীয় সংসদেও নারীবিদ্বেষী, বিকৃতমনস্ক, হতাশ পুরুষদের প্রতিনিধিত্ব আছে।” এই মন্তব্যের পরই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, “একজন সহ-সাংসদের সঙ্গে শূয়োরের তুলনা করা সংসদীয় শালীনতার পরিপন্থী। লিঙ্গের দোহাই দিয়ে এমন গালাগালি চলতে পারে না।” কল্যাণ আরও বলেন, “মহুয়া যদি পুরুষ হতেন, এমন কথা বললে দেশে আগুন লেগে যেত।”
যদিও এই বিতর্কে কল্যাণের অতীত মন্তব্যও সামনে এসেছে। এক কলেজের ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে তাঁর এক বিতর্কিত মন্তব্যের পর মহুয়া মৈত্র বলেছিলেন, “নারীবিদ্বেষ কোনও দলের একার বিষয় নয়। কিন্তু তৃণমূলের বৈশিষ্ট্য হলো, আমরা নিজেদের দলের ভুলের বিরুদ্ধেও মুখ খুলি।” এরপরই কল্যাণ ব্যক্তিগত আক্রমণের দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং মহুয়াকে উদ্দেশ্য করে তাঁর পারিবারিক জীবন নিয়ে কটাক্ষ করেন।
দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অসন্তুষ্ট এবং তিনি অবিলম্বে এই বিবাদ থামানোর নির্দেশ দিয়েছেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সাংসদদের এই ব্যক্তিগত আক্রমণ ছেড়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা পুনর্বিবেচনা নিয়ে আসন্ন আন্দোলনে মনোযোগ দিতে বলেছেন। খবর অনুযায়ী, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করছেন এবং খুব শীঘ্রই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।