পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের সিন্ধু বদ্বীপ বর্তমানে এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক ও মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। সিন্ধু নদের জল প্রবাহ কমে যাওয়ায় সমুদ্রের লোনা জল প্রবেশ করে এখানকার কৃষিজমি নষ্ট করে দিয়েছে। এর ফলে প্রায় ৪০টি গ্রাম সম্পূর্ণ জনশূন্য হয়ে পড়েছে এবং গত দুই দশকে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত এই মানুষগুলির বেশিরভাগই করাচিতে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিব্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে সিন্ধু নদ কাশ্মীর হয়ে পাকিস্তান দিয়ে আরব সাগরে মিশেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন কারণে এর জলপ্রবাহ মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। মার্কিন-পাকিস্তান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ ইন ওয়াটার-এর ২০১৮ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, সেচ খাল, জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমবাহ ও বরফ গলার হার কমার ফলে ১৯৫০ সাল থেকে সিন্ধু বদ্বীপে জলের প্রবাহ ৮০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর ফলস্বরূপ, বদ্বীপ অঞ্চলের জল প্রায় ৭০ শতাংশ লবণাক্ত হয়ে পড়েছে।
কয়েক মাস আগে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল করে, যা সিন্ধু নদের জল প্রবাহ আরও কমিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সিন্ধু প্রদেশের মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।
পাকিস্তান সরকার পাঞ্জাবের চোলিস্তান মরুভূমিতে একটি নদী খাল নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য কাজ করছে, যা সিন্ধু প্রদেশে তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছে। সিন্ধু এবং বেলুচিস্তানের মানুষজনের অভিযোগ, এই খাল প্রকল্পের ফলে তারা সিন্ধু নদের জল থেকে বঞ্চিত হবেন, যা তাদের কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি করবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই প্রকল্প সামরিক বাহিনীর নির্দেশে হচ্ছে এবং এটি তাদের জীবন ও জীবিকাকে আরও বিপন্ন করে তুলবে।