বিবাহবিচ্ছেদের পর ভরণপোষণের দাবি নিয়ে একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, প্রথম বিয়ের ডিভোর্স থেকে প্রাপ্ত ভরণপোষণ বা খোরপোশ (Alimony) পরবর্তী বিবাহবিচ্ছেদে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক হতে পারে না। এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ আদালত দ্বিতীয় ডিভোর্সের সময়ে স্ত্রীর ভরণপোষণ দাবির অধিকার নেই, এমন যুক্তি দিয়ে স্বামীর করা একটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
এই মামলার এক ব্যক্তি দাবি করেছিলেন যে, তাঁর স্ত্রী প্রথম স্বামী থেকে যথেষ্ট পরিমাণ ভরণপোষণ পেয়েছেন, তাই দ্বিতীয় বিবাহবিচ্ছেদে তাঁর কোনো আর্থিক সহায়তার অধিকার নেই। কিন্তু প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “প্রথম বিয়ে থেকে পাওয়া ভরণপোষণ বর্তমান মামলার বিচারে অপ্রাসঙ্গিক।”
সম্পর্ক ভাঙার কারণ ও আদালতের হস্তক্ষেপ
এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদের বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে বিবাহবিচ্ছেদের অনুমোদন দিয়েছে। আদালত পর্যবেক্ষণ করে জানায় যে, মাত্র এক বছর নয় মাসের দাম্পত্য জীবন সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে এবং এই সম্পর্ক আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
স্ত্রী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসা আইনে (আইপিসি ৪৯৮এ ধারা) মামলা দায়ের করেছিলেন। প্রথমে দু’পক্ষ পারস্পরিক সম্মতিতে ডিভোর্সে রাজি হলেও, পরে স্ত্রী সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। এর পর স্বামী বোম্বে হাইকোর্টে মামলা খারিজের আবেদন জানান, যা প্রত্যাখ্যাত হয়। এরপর তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
ভরণপোষণ নিয়ে টানাপোড়েন
সুপ্রিম কোর্টে স্বামী বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জানান এবং স্ত্রীকে মুম্বাইয়ের অভিজাত এলাকায় অবস্থিত ৪ কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট অথবা নগদ ৪ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু স্ত্রী ১২ কোটি টাকার স্থায়ী ভরণপোষণ দাবি করেন।
জবাবে স্বামী জানান, তিনি বর্তমানে কর্মহীন এবং তাঁর প্রথম বিয়ের অটিজমে আক্রান্ত সন্তানের দেখভালের জন্য চাকরি ছেড়েছেন। আদালত স্বামীর এই বক্তব্য বিবেচনায় নেয়। আদালত পর্যবেক্ষণ করে জানায়, স্ত্রী নিজেও উপার্জনক্ষম এবং তাঁর আইটি সেক্টরে কাজের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা রয়েছে।
আদালত আরও জানায়, “বর্তমানে আবেদনকারী কর্মহীন। সেই পরিস্থিতিতে আরও ভরণপোষণ চাওয়ার কোনো যুক্তি নেই।” স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীর লিংকডইন প্রোফাইলে তার চাকরির তথ্যের যে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তাও আদালত খারিজ করে দেয়।
গার্হস্থ্য হিংসার মামলা খারিজ
সুপ্রিম কোর্ট গার্হস্থ্য হিংসার মামলাটিকে বাতিল করে বলেছে যে, মামলাটি অতিরঞ্জিত অভিযোগের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। এই মামলার রায় অনুযায়ী, স্বামীকে আগামী ৩০ আগস্ট, ২০২৫-এর মধ্যে ফ্ল্যাটের গিফট ডিড সম্পন্ন করতে হবে, যার পরেই বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর হবে। এই মামলায় স্বামীর পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট মাধবী দিওয়ান এবং স্ত্রীর পক্ষে তিনি নিজেই সওয়াল করেন।