প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবেগৌড়ার নাতি এবং জেডি(এস)-এর সাসপেন্ডেড নেতা প্রজ্জ্বল রেভান্নার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলায় ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেছে বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত। শুক্রবারই দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর আজ বিচারপতি তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে, আদালত প্রজ্জ্বলকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং নির্যাতিতাকে ৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যা মোট ১১ লক্ষ টাকা। প্রজ্জ্বলের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগের মধ্যে এটি প্রথম মামলার রায়।
ঘটনার সূত্রপাত ২০২১ সালে, যখন কোভিডের কারণে লকডাউন চলছিল। ৪৮ বছর বয়সী ওই নির্যাতিতা অভিযোগ করেন, তিনি কর্ণাটকের হাসান জেলার হোলেনারাসিপুরার রেভানা পরিবারের একটি ফার্ম হাউজে পরিচারিকার কাজ করতেন। সেই সময় প্রজ্জ্বল রেভান্না তাকে দু’বার ধর্ষণ করেন এবং সেই ঘটনা মোবাইলে ভিডিও করে রাখেন বলে অভিযোগ। এই নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতেই প্রজ্জ্বলের বিরুদ্ধে প্রথম ধর্ষণের মামলাটি দায়ের হয়েছিল।
মামলার দ্রুত অগ্রগতি ও চার্জ গঠন:
এ বছরের আগস্ট মাসেই প্রজ্জ্বল রেভান্নার বিরুদ্ধে আদালত চার্জ ফ্রেম করে। তার বিরুদ্ধে প্রভাবশালী পদে থেকে মহিলাকে ধর্ষণ, বারংবার ধর্ষণ, সম্মানহানি, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রমাণ লোপাট সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়। উল্লেখ্য, গত বছর প্রায় ২০০০টি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছিল, যেখানে রেভান্নার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। এই ভিডিওগুলি সামনে আসার পরই তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের হয়।
অপহণের অভিযোগ ও গ্রেফতার:
ধর্ষণের প্রথম অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরপরই ওই নির্যাতিতাকে অপহরণ করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ছিল যে, রেভান্নার বাবা-মা তাদের ছেলের বিরুদ্ধে যাতে ওই মহিলা সাক্ষ্য দিতে না পারেন, সেই উদ্দেশ্যেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন। পরে কর্ণাটক পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল একটি ফার্ম হাউজ থেকে তাকে উদ্ধার করে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর প্রজ্জ্বল রেভান্নার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পরই তিনি জার্মানি পালিয়ে যান। তবে গত বছর লোকসভা ভোট শেষ হওয়ার পর মে মাসে তিনি ভারতে ফেরার সাথে সাথেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে তিনি জেলেই রয়েছেন।
আদালতের এই রায় সমাজে মহিলাদের প্রতি ক্রমবর্ধমান যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি কঠোর বার্তা বহন করছে। এটি প্রমাণ করে যে, প্রভাবশালী পদে থাকা ব্যক্তিরাও আইনের ঊর্ধ্বে নন এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিচার ব্যবস্থা বদ্ধপরিকর।