প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবেগৌড়ার নাতি এবং প্রাক্তন সাংসদ প্রজ্জ্বল রেভান্নার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলায় ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করল আদালত। মাইসুরুর কে আর নগরের এক পরিচারিকাকে দু’বার ধর্ষণ এবং সেই ঘটনার ভিডিও দেখিয়ে হুমকির অভিযোগে প্রজ্জ্বলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই জরিমানার সম্পূর্ণ অর্থ ধর্ষিতাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করা হবে। এই মামলার দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া এবং মাত্র ১৪ মাসের মধ্যে রায় ঘোষণা, যৌন হেনস্থা সংক্রান্ত অপরাধের নিষ্পত্তিতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২১ সালের করোনাভাইরাস লকডাউন চলাকালীন ৪৮ বছর বয়সী ওই পরিচারিকাকে প্রজ্জ্বল রেভান্না ধর্ষণ করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। হাসান জেলার হোলেনারাসিপুরা গ্রামীণ থানায় দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে কর্ণাটক পুলিশের সাইবার ক্রাইম এবং সিআইডি এই গুরুতর অভিযোগের তদন্ত শুরু করে। তদন্ত শেষে মামলাটি আদালতে ওঠে এবং আজ তার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হলো।
বিতর্কের সূত্রপাত এবং দ্রুত বিচার:
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় প্রজ্জ্বল রেভান্না কর্ণাটকের হাসান কেন্দ্র থেকে জনতা দল (সেকুলার)-এর প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন একটি পেন ড্রাইভের মাধ্যমে তার বেশ কিছু অশ্লীল ভিডিও জনসম্মুখে আসে, যা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। যদিও প্রজ্জ্বল প্রথমে ভিডিওগুলিকে ‘জাল’ বলে দাবি করে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, কিন্তু এর পরপরই তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের গুরুতর অভিযোগ দায়ের হয়।
২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই মামলার শুনানি শুরু হয়। এরপর থেকে দ্রুত গতিতে সাক্ষীদের বয়ান গ্রহণ এবং ফরেন্সিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (FSL) থেকে অশ্লীল ভিডিওগুলির সত্যতা এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের ক্রাইম স্পট রিপোর্ট এই বিচার প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া প্রমাণ করে যে, গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা কাটানো সম্ভব।
আদালতের এই রায় সমাজে যৌন হেনস্থার শিকার নারীদের প্রতি ন্যায়বিচারের বার্তা দিচ্ছে। একইসাথে, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধেও আইন তার নিজস্ব গতিতে চলতে পারে, এই বিশ্বাসকে আরও সুদৃঢ় করল প্রজ্জ্বল রেভান্নার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের এই রায়। এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলেও যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।