“পেহেলগামে রক্তক্ষয়ী হামলায় ৫৫ দিন পরও অধরা জঙ্গিরা?”-কেন্দ্রর বিরুদ্ধে অভিষেকের ৫ প্রশ্নবাণ!

গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীর (ভূস্বর্গ) আবারও রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল, ২৬ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। এই মর্মান্তিক ঘটনার ৫৫ দিন পেরিয়ে গেলেও একজন আততায়ীও ধরা পড়েনি। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ও গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার (১০ জুন, ২০২৪) X হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে পাঁচ ধারালো প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি জবাবদিহি চেয়েছেন। পহেলগাম হামলার পরেও বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে পাকিস্তানের ৪০ বিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য পাওয়াকে তিনি ভারতের কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলেও মনে করেন।

প্রশ্ন ১: নিরাপত্তা ব্যর্থতার দায় কার?
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম প্রশ্ন, “সীমান্ত টপকে জঙ্গিরা ভারতের মাটিতে ঢুকল, তারপর হামলা চালাল এবং পালিয়ে গেল। কিন্তু ‘কী ভাবে তারা ঢুকল?’ এই বিশাল নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য দায়ী কে? কে এর জবাবদিহি করবে?” এই প্রশ্ন সরাসরি দেশের সীমান্ত সুরক্ষা এবং গোয়েন্দা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন চিহ্ন এঁকে দিয়েছে।

প্রশ্ন ২: ব্যর্থতার পুরস্কার? পেগাসাস কেন জঙ্গিদের জন্য নয়?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা পহেলগামের জঙ্গি হামলাকে গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলেই মনে করেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, ঘটনার একমাস পরেই ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (IB) প্রধানের এক বছরের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। অভিষেক প্রশ্ন তুলেছেন, “এটা কি ব্যর্থতার পর পুরস্কার? এর কারণ কী? বাধ্যবাধকতা কী?” তিনি আরও যোগ করেন, “সরকার যদি PEGASUS স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে বিরোধী নেতা (আমিও তার মধ্যে একজন), সাংবাদিক এবং বিচারপতিদের উপর নজরদারি চালাতে পারে, তাহলে সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ক ও সন্দেহভাজনদের উপর এই প্রযুক্তি প্রয়োগে বাধা কোথায়?” এটি পেগাসাস কেলেঙ্কারি এবং সরকারের অগ্রাধিকার নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

প্রশ্ন ৩: আততায়ীরা কোথায়? জীবিত না মৃত?
হামলার প্রায় দুই মাস কেটে গেলেও জঙ্গিরা এখনও অধরা। তারা এখন কোথায়—জীবিত না মৃত? অভিষেক জানতে চেয়েছেন, “এই নারকীয় হামলার জন্য দায়ী চার সন্ত্রাসবাদী এখন কোথায়? তারা কি মারা গেছে, না বেঁচে আছে? যদি তারা নিহত হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার এই নিয়ে স্পষ্ট বিবৃতি দিচ্ছে না কেন? আর যদি না হয়ে থাকে, তবে চুপ করে বসে আছে কেন?” এই প্রশ্নটি সরকারের স্বচ্ছতা এবং সন্ত্রাস দমনে তাদের কার্যকারিতা নিয়ে গুরুতর সংশয় তৈরি করেছে।

প্রশ্ন ৪: PoK পুনরুদ্ধার এবং ট্রাম্পের মধ্যস্থতা নিয়ে নীরবতা কেন?
সম্প্রতি অপারেশন সিঁদুর ও সন্ত্রাস দমনে ভারতের পদক্ষেপ নিয়ে সর্বদলীয় সংসদীয় দলের প্রতিনিধি হয়ে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া সফর করেন অভিষেক। সেখানে তিনি প্রতিটি বৈঠক এবং আলোচনা সভায় পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দেন এবং স্পষ্ট ভাষায় জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে এখন শুধু মাত্র পাক-অধিকৃত কাশ্মীর (PoK) নিয়েই কথা হতে পারে। এক্স পোস্টে তিনি জানতে চান, ভারত কবে PoK পুনরুদ্ধার করবে?

৭ মে পহেলগামের পাল্টা হিসেবে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করেছিল, কিন্তু ১০ মে সংঘর্ষবিরতি হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তাঁর কথাতেই দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয়েছে। অভিষেক প্রশ্ন তুলেছেন, “বাণিজ্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংঘর্ষবিরতি, এই নিয়ে কেন কেন্দ্রীয় সরকার এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি? সারা দেশ যখন একসঙ্গে দাঁড়িয়েছিল, তখন কেন ভারতবাসীর আবেগকে অবজ্ঞা করা হলো?”

প্রশ্ন ৫: ‘বিশ্বগুরু’র দাবি এবং পাকিস্তানের অর্থ সাহায্য
সর্বদলীয় সংসদীয় দল ৩৩টি দেশে ঘুরেছে। অভিষেক প্রশ্ন করেছেন, “কটি দেশ খোলাখুলিভাবে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে?” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘বিশ্বগুরু’ হয়ে ওঠার দাবিকেও কটাক্ষ করে তিনি লিখেছেন, “আমরা সত্যিই বিশ্বগুরু হই, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে থাকি, তাহলে পহেলগামের ঠিক পরেই IMF কী করে পাকিস্তানকে ১ বিলিয়ন এবং বিশ্বব্যাংক ৪০ বিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য করল? যে দেশ বারবার সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাস ছড়ায়, তারা কীভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়?”

শেষের টিপ্পনী: স্বচ্ছতা, দায়িত্ববোধ ও ফলাফলের দাবি
সবশেষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের গত ১০ বছরে বিদেশমন্ত্রকের পিছনে ২,০০,০০০ কোটি টাকা (দুই লক্ষ কোটি) খরচ করার বিষয়টি উল্লেখ করে একটি তীক্ষ্ণ টিপ্পনী জুড়ে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “এই প্রশাসনের থেকে আমরা চাই স্বচ্ছতা, দায়িত্ববোধ আর ফলাফল।”

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পাঁচ প্রশ্ন নিঃসন্দেহে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ বাড়াবে এবং ভূস্বর্গের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে জনমানসে চলমান প্রশ্নগুলোকে আরও প্রকট করে তুলবে। গোটা দেশ এখন এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের অপেক্ষায়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy