পূর্ব বর্ধমানে পাক চর সন্দেহে গ্রেফতার, ‘শিক্ষক’ পরিচয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল গুপ্তচর! হতবাক বাড়ির মালিক

নিজেকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক পরিচয় দিয়ে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির দিঘির পাড় এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল রাকেশ গুপ্তা। মাকে নিয়ে থাকার কথা বলে মাসিক সাত হাজার টাকায় ভাড়া নেয় সে। কিন্তু সেই রাকেশ গুপ্তা এবং তার সঙ্গী মুকেশ রজককে সম্প্রতি পাকিস্তানের চরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে বেঙ্গল এসটিএফ। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে তদন্তকারী অফিসারা। এই ঘটনা রাজ্য জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে, এবং বাড়ির মালিক সহ স্থানীয় বাসিন্দারা হতবাক।

বাড়ির মালিকের বিস্ময়: ‘গিটার বাজিয়ে প্রার্থনা করত, কী করত বুঝতেই পারিনি’

মেমারির দেশবন্ধুপল্লী এলাকার বাসিন্দা এবং এই বাড়ির মালিক দিলীপ সিকদার এই ঘটনা শুনে রীতিমতো অবাক। তিনি বলেন, “আমি কোনও দিনই [ভাড়াটের ঘরে] যেতাম না। গিটার বাজিয়ে প্রার্থনা করত বলে শুনেছি। অনলাইনে ভাড়া পেয়ে যেতাম। কিন্তু তলে তলে যে তারা এইসব কাজ করছে, তা বুঝতে পারিনি। আমি জানতাম, মা ও ছেলে থাকে।” যদিও এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ছয়-সাতজন থাকতো এবং অচেনা অনেকেই আসতো তাদের কাছে।

পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে গোপন কার্যকলাপ

দিলীপবাবুর তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় সিঁড়ি দিয়ে ওঠার মুখের ঘরেই থাকত পাক চর সন্দেহে ধৃত রাকেশ গুপ্তা ও মুকেশ রজক। মুকেশের বাড়ি পানাগড়ে এবং রাকেশের বাড়ি কলকাতার প্রিয়নাথ মল্লিক লেনে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, তারা পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ঘরে থাকতো। কিন্তু এলাকাবাসীর সঙ্গে তারা সবসময় দূরত্ব বজায় রেখে চলতো। ছোট্ট একটি ঘরে সাত-আট জনও থাকত, এবং বাইরে থেকেও অনেকেই আসতো। কখনও কখনও ল্যাপটপ নিয়েও তারা বাইরে যেত।

এলাকাবাসীর উদ্বেগ: ‘পুলিশ আরও সক্রিয় হোক’

এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এই ধৃত ব্যক্তিরা পাশের ঘরের লোকের সঙ্গেও সেভাবে মিশত না। তারা যে পাকিস্তানের চর, তা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। এই ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর স্থানীয়রা পুলিশ প্রশাসনের আরও সক্রিয় হওয়ার দাবি তুলেছেন। পাশাপাশি, বাড়ির মালিকদেরও উচিত ভাড়াটেরা কোন কাজের সঙ্গে যুক্ত সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা, নচেত এই ধরনের ঘটনা বাড়তেই থাকবে বলে তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার জন্য গুপ্তচররা কীভাবে ছদ্মবেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে যেতে পারে। এসটিএফের এই গ্রেফতারি একটি বড় সাফল্য হলেও, এই ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ করতে জনসাধারণের সচেতনতা এবং পুলিশি নজরদারি আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy