বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হিংসার এক মর্মান্তিক রূপ প্রত্যক্ষ করল বিশ্ব। ময়মনসিংহের ভালুকা এলাকায় ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাস নামে এক হিন্দু শ্রমিককে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, নীল সোয়েটশার্ট পরা দীপু তাঁর মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তিদের কাছে কাকুতি-মিনতি করছেন এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন।
তসলিমা নাসরিনের অভিযোগ ও ঘটনার প্রেক্ষাপট: নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন এই ঘটনার একটি ভিডিও শেয়ার করে বাংলাদেশের পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ময়মনসিংহের একটি কারখানার শ্রমিক দীপুকে তাঁর এক মুসলিম সহকর্মী ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে নবীর অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়েছিলেন। তসলিমা প্রশ্ন তুলেছেন, পুলিশি হেফাজতে থাকা সত্ত্বেও কীভাবে উগ্র জনতা দীপুকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে প্রকাশ্যে মারধর করে ঝুলিয়ে দিল এবং শেষে পুড়িয়ে মারল? তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, হয় পুলিশ উগ্রপন্থীদের মদত দিয়েছে অথবা চরম অপদার্থতার পরিচয় দিয়েছে।
পরিবারের করুণ অবস্থা ও শশী থারুরের উদ্বেগ: দীপু দাস ছিলেন তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যুতে প্রতিবন্ধী বাবা, মা, স্ত্রী ও ছোট সন্তান এখন অথৈ জলে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর একে ‘অসহনীয় ট্র্যাজেডি’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, দোষীদের শাস্তির জন্য ঠিক কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে সরকারের পরিকল্পনা কী?
সরকারের পদক্ষেপ: আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। ২০ ডিসেম্বর সরকারের তরফে জানানো হয়েছে যে, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে তসলিমা নাসরিন বা শশী থারুরের মতো ব্যক্তিত্বরা মনে করছেন, বিচার প্রক্রিয়া কতদূর স্বচ্ছ হবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।