সারা পৃথিবীতে ধ্বংসলীলা চালানো কোভিড-১৯ ভাইরাস শরীরের ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও কিডনির ক্ষতি করেছে। তবে নতুন এক গবেষণায় আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। ফ্লোরে ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ ইন মেলবোর্নের বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, কোভিড-১৯ ইনফেকশনের ফলে পুরুষ ইঁদুরের শুক্রাণুতে পরিবর্তন আসছে, যার ফলস্বরূপ তাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে অ্যানজাইটি (উৎকণ্ঠা) বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গত ১২ অক্টোবর ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায়, পুরুষ ইঁদুরকে প্রথমে কোভিড-১৯ দ্বারা সংক্রামিত করা হয়। এরপর তাদের সঙ্গমের ফলে জন্ম নেওয়া সন্তানের স্বাস্থ্য ও আচরণ পরীক্ষা করা হয়।
কীভাবে এই পরিবর্তন ছড়াচ্ছে?
গবেষণার প্রথম লেখক এলিজাবেথ ক্লেইম্যান জানান, ইনফেক্টেড বাবার সব ইঁদুর-সন্তানের মধ্যেই অ্যানজাইটি বা উৎকণ্ঠার মতো সমস্যা দেখা গেছে, যেখানে সুস্থ বাবার সন্তানেরা এই সমস্যায় ভোগেনি।
বিজ্ঞানীরা এই পরিবর্তনের নাম দিয়েছেন এপিজেনেটিক ইনহেরিটেন্স— অর্থাৎ, ডিএনএ-এর কাঠামোতে কোনও বদল ছাড়াই যখন একটি বৈশিষ্ট্য (বা সমস্যা) বাচ্চার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। দেখা গেছে, সংক্রামিত বাবার নারী বাচ্চাদের মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অঞ্চলের কিছু জিনের গতিবিধি বদলে যায়, যার ফলে তাদের মধ্যে অ্যানজাইটি বাড়ে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই ভাইরাস বাবার শুক্রাণুতে এমন RNA-তে বদল আনে যা বাচ্চার ব্রেন ডেভেলপমেন্টকে নিয়ন্ত্রণ করে।
এটিই প্রথম গবেষণা যেখানে সন্তানের মধ্যে কোভিডের লং টার্ম প্রভাব নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়েছে। যদিও গবেষণাটি ইঁদুরের উপর করা হয়েছে, তাই মানুষের উপর এর প্রভাব নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, যেহেতু কোভিড-১৯ দীর্ঘকালে শরীরের উপর বিরাট প্রভাব ফেলে (লং কোভিড), তাই করোনা নিয়ে সাবধানে থাকা জরুরি।