ওড়িশার পুরী জেলার বালঙ্গির এলাকায় ১৯ জুন দুষ্কৃতীদের দ্বারা পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার শিকার হওয়া সেই ১৫ বছর বয়সী কিশোরীটির শেষ রক্ষা হলো না। শনিবার দিল্লির এইমসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনা দেশজুড়ে শোক এবং ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
গত ১৯ জুন বালঙ্গির এলাকায় দুষ্কৃতীরা ওই কিশোরীকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে। প্রায় ৭৫ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় তাকে প্রথমে ভুবনেশ্বরের এইমসে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে, গত ১৯ জুলাই অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দিল্লির এইমসে নিয়ে আসা হয় এবং সেখানে বার্ন আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর শেষ পর্যন্ত জীবনযুদ্ধে হেরে গেল মেয়েটি।
মুখ্যমন্ত্রী ও উপ-মুখ্যমন্ত্রীর শোক প্রকাশ:
এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি। এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “বালঙ্গিরের ঘটনায় মেয়েটির মৃত্যুর খবর শুনে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। সরকারের সকল প্রচেষ্টা এবং দিল্লির এইমসের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দলের নিরলস প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তার জীবন বাঁচানো যায়নি। আমি মেয়েটির আত্মার শান্তি কামনা করি এবং ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যেন তাঁর পরিবারকে এই অপূরণীয় ক্ষতি সহ্য করার শক্তি দান করেন।”
ওড়িশার উপ-মুখ্যমন্ত্রী প্রবতী পারিদাও এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এবং এটিকে “অপ্রত্যাশিত এবং দুর্ভাগ্যজনক” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি এক্স-এ লিখেছেন, “একটি অপ্রত্যাশিত এবং দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার পর, দিল্লির এইমসে চিকিৎসাধীন বালঙ্গিরের ভুক্তভোগী মারা গেছেন। বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে, আমি এই দুঃখজনক পরিস্থিতিতে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। চিকিৎসা দল এবং সরকারের সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, তাকে বাঁচানো যায়নি বলে আমরা গভীরভাবে দুঃখিত।”
পুলিশের অনুরোধ ও তদন্তের অগ্রগতি:
এদিকে, ওড়িশা পুলিশ এই মর্মান্তিক মুহূর্তে এই বিষয়ে কোনো “সংবেদনশীল মন্তব্য” না করার আহ্বান জানিয়েছে। এক্স-এ এক পোস্টে পুলিশ বলেছে, “এখন পর্যন্ত যে তদন্ত চালানো হয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে অন্য কোনও ব্যক্তি জড়িত নয়। তাই, আমরা অনুরোধ করছি যে এই মর্মান্তিক মুহূর্তে এই বিষয়ে কেউ কোনো সংবেদনশীল মন্তব্য না করুন।” পুলিশ আরও জানিয়েছে যে তদন্ত তার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
পুলিশের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ওই নাবালিকা তার বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে গিয়েছিল। পথে তাকে অপহরণ করে নদীর ধারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই তাকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আক্রান্ত অবস্থায় নির্যাতিতা কোনোমতে ঘটনাস্থল থেকে কারো বাড়িতে পৌঁছায়, এরপর তার খুড়তুতো ভাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে ঘটনার আসল কারণ এবং কীভাবে এটি ঘটলো, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত পুলিশের মধ্যে ধোঁয়াশা রয়েছে।
এই ঘটনা আবারও নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে সমাজে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।