পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত এক প্রাচীন গ্রাম— রঘুরাজপুর। কিন্তু এই গ্রাম আর পাঁচটা সাধারণ গ্রামের মতো নয়। এখানে পা রাখা মাত্রই আপনার মনে হবে আপনি কোনো আধুনিক আর্ট গ্যালারিতে প্রবেশ করেছেন। বাংলার প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশার এই গ্রামটিই ভারতের প্রথম ‘ঐতিহ্যবাহী গ্রাম’ (Heritage Village) হিসেবে স্বীকৃত, যা তিল তিল করে গড়ে তুলেছে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচার (INTACH)।
রঘুরাজপুর মানেই শিল্পের সুবাস। বিখ্যাত ওড়িশি নৃত্যগুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের স্মৃতিধন্য এই গ্রামের প্রতিটি বাড়ির দেওয়ালে আঁকা রয়েছে অসাধারণ সব ম্যুরাল ও পটচিত্র। ১২০টি পরিবারের প্রায় প্রতিটি সদস্যই কোনো না কোনো শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এদের হাতের জাদুতে অতি সাধারণ নারকেল, সুপুরি, তালপাতা, কিংবা এক টুকরো কাপড় হয়ে ওঠে অমূল্য শিল্পকীর্তি।
প্রকৃতির উপাদানে শিল্পের ছোঁয়া: এখানকার শিল্পীরা কেবল প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেন। তালপাতার ওপর সূক্ষ্ম খোদাই হোক বা হাতে তৈরি ভেষজ রঙে আঁকা পট্টচিত্র— সবটাই পরিবেশবান্ধব। নারকেলের খোলের ওপর রঙিন কারুকাজ, কাঁচের বোতল বা পাথরের ওপর খোদাইয়ের কাজে এঁদের দক্ষতা বিশ্বমানের। এছাড়াও তসর, সিল্ক এবং সুতির কাপড়ের ওপর ক্রেতাদের পছন্দমতো ছবি এঁকে দেন এই কারিগররা।
অভাব শুধু পর্যটকের: রঘুরাজপুরের শিল্পীরা মেলা বা সরকারি প্রদর্শনীতে অংশ নিলেও তাঁদের মূল বিক্রয় কেন্দ্র তাঁদের নিজেদের বাড়িই। পর্যটকরা এখানে সরাসরি শিল্পীদের কাজ দেখে কেনাকাটা করতে পারেন। তবে একরাশ আক্ষেপও রয়েছে এখানকার শিল্পীদের মনে। তাঁদের দাবি, সারাবছর পুরীতে লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী ও পর্যটকের সমাগম হলেও, মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই অনন্য শিল্প-গ্রামে খুব কম মানুষেরই পা পড়ে। প্রচারের অভাবে ভারতের এই প্রাচীন শিল্পকলা আজও অনেকাংশে অন্তরালে রয়ে গিয়েছে।