ক্যালেন্ডার বলছে আজ ২ আগস্ট, কিন্তু কলকাতার এক দরজি, রাকেশ সিংয়ের কাছে আজই তার জীবনের সবচেয়ে বড় নায়ক, বলিউডের শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চনের জন্মদিন। অবাক হচ্ছেন? কারণটা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ৪৭ বছর আগে, ১৯৮২ সালের ২ আগস্টে।
ওই বছরের ২৬ জুলাই ‘কুলি’ সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে এক মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন। গুরুতর আহত অবস্থায় দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। অবস্থা এতটাই সঙ্কটজনক ছিল যে চিকিৎসকরা তাকে ক্লিনিক্যালি ডেড পর্যন্ত ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু অলৌকিকভাবে ২ আগস্ট তার অবস্থার উন্নতি হয়। মৃত্যুর মুখ থেকে যেন নতুন জীবন ফিরে পান বিগ বি। তার এই ‘পুনর্জন্মের’ দিনটিকেই তখন থেকে প্রতি বছর ধুমধাম করে জন্মদিন হিসেবে পালন করে আসছেন রাকেশ সিং। পরিচিত মহলে তিনি ‘রাকেশ বচ্চন’ নামেই পরিচিত।
কেন ২ আগস্ট?
রাকেশ সিং (৫৭) জানান, তার নিজের জন্মদিন ২৮ জুলাই হলেও, তিনি তা কখনো উদযাপন করেন না। এর কারণ হলো, ২৬ জুলাই অমিতাভের দুর্ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু ২ আগস্ট, তার প্রিয় অভিনেতার জীবনে যে নতুন সকাল এসেছিল, সেই দিনটিকে তিনি নিজের জন্মদিনের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেন। এই দিনে তিনি নতুন পোশাক পরেন এবং প্রতিজ্ঞা করেছেন, যতদিন বেঁচে থাকবেন, এই রীতি বজায় রাখবেন।
শ্বেতা লেডিস টেলার্স: এক ভক্তের নিবেদিত প্রেমের প্রতীক
পেশায় দরজি রাকেশ সিংয়ের দোকানটি কলকাতার মহাত্মা গান্ধী রোড ও সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থলে অবস্থিত মাধব ভবনের গেটে। তার এই দোকানের নামকরণের পেছনেও রয়েছে অমিতাভ প্রীতি। বাবার দোকান ‘উমা জেন্টস টেলার’ এর দায়িত্ব নেওয়ার পর, রাকেশ অমিতাভের মেয়ে শ্বেতার নামে দোকানের নাম বদলে দেন এবং সেটিকে মেয়েদের টেলারিংয়ের দোকানে রূপান্তরিত করেন।
সংগ্রহে বিগ বি’র স্মারক: সিনেমা টিকিট থেকে পেপার কাটিং
রাকেশ সিং শুধু একজন ভক্ত নন, তিনি অমিতাভ বচ্চনের একজন নিবেদিত সংগ্রাহকও। তার কাছে অমিতাভ অভিনীত প্রতিটি সিনেমার টিকিট সযত্নে রাখা আছে। ‘সাত হিন্দুস্তানি’ থেকে শুরু করে ‘সিলসিলা’, ‘নমক হালাল’, ‘জঞ্জির’, ‘কুলি’, ‘শাহেনশাহ’, ‘শোলে’, ‘দিওয়ার’, ‘আনন্দ’, ‘শারাবী’, ‘সূর্যবংশম’, ‘কভি খুশি কভি গম’, ‘পিকু’, ‘পিঙ্ক’ থেকে ‘ব্ল্যাক’ পর্যন্ত, অমিতাভের কোনো সিনেমাই তিনি দেখা বাকি রাখেননি। প্রতিটি সিনেমার প্রথম ও দ্বিতীয় শো, এমনকি দ্বিতীয় দিনের প্রথম শো দেখার টিকিটও তিনি নিজের সংগ্রহে রেখেছেন। এছাড়াও, তার কাছে অমিতাভের অজস্র পেপার কাটিং এবং বিজ্ঞাপনী ছবি রয়েছে।
রাকেশ বলেন, “অমিতাভের সিনেমা হলে এলে নিজেকে আটকে রাখতে পারতাম না। উত্তেজিত হয়ে থাকতাম কবে দেখব। এখনও থাকি। সেখান থেকেই বিগ বি’র ছবির পোস্টার, ব্যানার নিজের সংগ্রহে রেখেছি। বিজ্ঞাপনের কাটিং রেখেছি।” ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি একটি বহুজাতিক পানীয় সংস্থার ছবি সংগ্রহে রেখেছেন, কারণ সেটির ভেতরে অমিতাভের ছবি রয়েছে। এমনকি একটি কাপড়ের থান কোম্পানির টুকরোও তার কাছে আছে, যেখানে অমিতাভের নাম রয়েছে।
অমিতাভই তার ‘ভগবান’
রাকেশ সিংয়ের কাছে অমিতাভ বচ্চন কেবল একজন অভিনেতা নন, তিনি তার কাছে ভগবানের আসনে অধিষ্ঠিত। তার দোকানে নানা দেবদেবীর ছবির পাশেই ঝোলানো আছে বিগ বি’র একাধিক ছবি। বলিউডের ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’-এর মতো পোশাক ও ঘড়ি পরেন রাকেশ। কলকাতায় অমিতাভ এলেই সব কাজ ফেলে তিনি ছুটে যান এক পলক তার ‘লিভিং গড’কে দেখতে বা ছুঁতে।
এমনকি, অমিতাভের প্রতি তার নিঃশর্ত ভালোবাসার জন্য তাকে পরিবারের কাছে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। তবুও রাকেশের বচ্চন প্রেম অটুট। তিনি অকপটে বলেন, “একবার স্ত্রী বলেছিল অমিতাভকে পছন্দ করা ছেড়ে দাও। আমি বলেছিলাম, তোমায় ছাড়তে পারব তবু অমিতাভকে পারব না। ওঁর প্রতি আমার অন্যরকম ভালোবাসা।” এই অকৃত্রিম ভক্তিই রাকেশ সিংকে অমিতাভ বচ্চনের এক অনন্য ভক্ত হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে।