পুত্রসন্তানের আকাঙ্ক্ষা, উত্তরপ্রদেশে মা কর্তৃক নবজাতক কন্যা সন্তানকে হত্যার অভিযোগ, দেশজুড়ে চাঞ্চল্য

পুত্রসন্তান জন্ম দিতে না পারার মানসিক চাপ এবং শ্বশুরবাড়ির ক্রমাগত তিরস্কার সহ্য করতে না পেরে এক জন্মদাত্রী মা তার তিন সপ্তাহের নবজাতক কন্যা সন্তানকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উত্তরপ্রদেশের এই মর্মান্তিক ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এবং সমাজের গভীরে প্রোথিত লিঙ্গ বৈষম্য ও কুসংস্কারের এক ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত মায়ের নাম নগিনা। ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল যবনেশ কুমারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এই দম্পতির ইতোমধ্যেই দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। গত ৮ জুলাই তৃতীয়বারের মতো নগিনা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। অভিযোগ, এর পরপরই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের পক্ষ থেকে তার উপর মানসিক নির্যাতন ও চাপ বাড়তে থাকে। ছেলে সন্তান না হওয়ায় তাকে নিয়মিত নানা কটু কথা শুনতে হতো।

ঘটনার বিবরণ:

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ঘটনার দিন যবনেশের পরিবারের সদস্যরা বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন। দুপুরে যখন তাঁরা ফিরে আসেন, তখন যবনেশের ভাইয়ের স্ত্রী লক্ষ্য করেন যে সদ্যোজাত মেয়েটি ঠান্ডা এবং নিস্তেজ হয়ে পড়ে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে মনে করেছিলেন যে এটি একটি স্বাভাবিক মৃত্যু, এবং সেই অনুযায়ী শিশুটিকে কবর দেওয়া হয়।

তবে, এর দু’দিন পর যবনেশ তার স্ত্রী নগিনার কাছে মেয়ের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে, নগিনা এই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান যে, তিনি দাঁতের মাজনের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তিন সপ্তাহের শিশুটিকে খুন করেছেন। এই চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ দ্রুত নগিনার বিরুদ্ধে খুনের মামলা (Murder Case) দায়ের করে এবং তাকে গ্রেফতার করে জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে।

মানসিক চাপ ও সমাজের প্রভাব:

প্রাথমিক তদন্তে আরও উঠে এসেছে যে, নগিনা দীর্ঘদিন ধরেই তীব্র মানসিক চাপে ভুগছিলেন। “পুত্রসন্তান চাই” – স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির এই অনবরত প্রত্যাশা তার উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছিল। এই অসহনীয় মানসিক যন্ত্রণাই তাকে এমন চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই ঘটনা আবারও ভারতের বিভিন্ন অংশে পুত্রসন্তানের আকাঙ্ক্ষা এবং লিঙ্গ বৈষম্যের ভয়াবহ প্রভাবকে সামনে এনেছে। এর আগে, “রাধে রাধে” বলায় ৩ বছরের ছাত্রীকে চড় মেরে মুখে টেপ দিয়ে শাস্তি দেওয়ার ঘটনা এবং পুরীর এক কিশোরীর আত্মহত্যা ঘিরে বিতর্কের মতো ঘটনাগুলিও সমাজে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার চিত্র তুলে ধরেছিল।

উত্তরপ্রদেশের এই ঘটনা শুধু একটি অপরাধ নয়, বরং একটি সামাজিক ব্যাধি যা আজও আমাদের সমাজকে জর্জরিত করছে। এই ঘটনার পর নারী অধিকার কর্মী এবং সমাজসেবীরা কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দিয়েছেন যাতে ভবিষ্যতে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy