পারিবারিক কলহের কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে, তার এক মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো হুগলির গোঘাটের রঘুবাটি অঞ্চলের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামে। গতকাল রাতে ছোট ভাই উৎপল ঘোষকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে বড় ভাই চঞ্চল ঘোষের বিরুদ্ধে। এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় শুধু একটি প্রাণই গেল না, শোকে উৎপলের স্ত্রী শ্রাবন্তী ঘোষও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, যিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্ত চঞ্চল ঘোষকে আটক করেছে পুলিশ, কিন্তু এই ঘটনা গ্রামের বুকে ফেলে গেছে গভীর শোকের ছায়া।
এক রাতের বিভীষিকা:
জানা গেছে, অভিযুক্ত চঞ্চল ঘোষ অবিবাহিত। তিনি আরামবাগ এসডিও অফিসের সামনে টাইপিংয়ের কাজ করেন, এবং মৃত উৎপলও (৩৮) তাঁর সঙ্গেই একই কাজ করতেন। গতকাল রাতে দুই ভাইয়ের মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে বিবাদ শুরু হয়, যা দ্রুতই চরম আকার ধারণ করে। অভিযোগ উঠেছে, সেই সময় চঞ্চল তাঁর ভাই উৎপলকে বেদম মারধর করেন। মারের চোটে উৎপল লুটিয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
শোকে মুহ্যমান পরিবার:
স্বামীর মৃত্যুর খবর শ্রাবন্তী ঘোষের কাছে ছিল এক অসহনীয় আঘাত। এই অকল্পনীয় শোক সামলাতে না পেরে তিনি বাড়ির পাশে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। প্রতিবেশীরা দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যান, যেখানে তিনি বর্তমানে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
এই ঘটনায় পরিবারের উপর নেমে এসেছে এক গভীর বিপর্যয়। মৃত উৎপলের রয়েছে দশ বছরের এক পুত্রসন্তান, যে এখন পিতৃহীন। উৎপল ও চঞ্চলের বাবা মহাদেব ঘোষ এই মর্মান্তিক ঘটনায় সম্পূর্ণ দিশেহারা। শোকে পাথর হয়ে তিনি বলেছেন, “আমি কিছুই জানি না। আমার নাতি আমাকে ফোন করে বলে, জ্যাঠার সঙ্গে বাবার ঝগড়া হয়েছে। জ্যাঠা মেরেছে বাবাকে। বড় ছেলে তার ভাইকে এমন মারল যে মারা গেল। আমার মাথা আর কাজ করছে না। ছোট বউমার এমন অবস্থা। জানি না কী করব আমি।” একজন বাবার এই অসহায় আর্তনাদ পুরো ঘটনার নির্মমতাকেই তুলে ধরছে।
পুলিশি তৎপরতা ও পরবর্তী পদক্ষেপ:
ঘটনার খবর পেয়ে গোঘাট থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত চঞ্চল ঘোষকে আটক করা হয়েছে। তবে, এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। তদন্তকারীরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং ঘটনার পেছনের প্রকৃত কারণ ও বিবাদের উৎস খতিয়ে দেখছেন।
এই পারিবারিক ট্র্যাজেডি হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। সামান্য পারিবারিক বিবাদ কীভাবে এমন ভয়াবহ খুনের ঘটনায় পর্যবসিত হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই ঘটনা সমাজের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা অসহিষ্ণুতা এবং ক্রোধের এক অন্ধকার দিককে উন্মোচন করে দিল, যার পরিণতিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল একটি পরিবার।