পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের বালুচিস্তান প্রদেশে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ ঘটনায় ৯ জন বাসযাত্রীকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড আবারও বালুচিস্তানের দীর্ঘদিনের অস্থিরতা ও সশস্ত্র সংঘাতের চিত্রকে সামনে এনেছে। প্রাদেশিক সরকারি মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ এবং আরেক কর্মকর্তা নাভেদ আলম রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একাধিক বাস থেকে যাত্রীদের জোরপূর্বক নামিয়ে কাছের এক পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়।
অমীমাংসিত প্রশ্ন ও পূর্বের সংযোগ:
এখনও পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেনি। তবে, অতীতের একই ধরনের ঘটনায় বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিদের নাম বারবার জড়িয়েছে। বিশেষত, পাঞ্জাব প্রদেশের বাসিন্দাদের লক্ষ্য করে অপহরণ ও হত্যার ঘটনা বালুচ জঙ্গিদের রণকৌশলের অংশ হিসেবে পরিচিত। বালুচিস্তান, যা আফগানিস্তান ও ইরান সীমান্তবর্তী এক খনিজ সমৃদ্ধ প্রদেশ, দীর্ঘদিন ধরে বালুচ লিবারেশন আর্মি (BLA)-এর মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রমে অশান্ত। এই গোষ্ঠীগুলো পাকিস্তান প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে, তারা পাঞ্জাব প্রদেশের স্বার্থে বালুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ করছে, যা এই অঞ্চলে বিদ্রোহ ও অস্থিরতার মূল কারণ।
অশান্ত বালুচিস্তানের ধারাবাহিক চিত্র:
এই হত্যাকাণ্ড বালুচিস্তানের চলমান অস্থিতিশীলতারই একটি ধারাবাহিক অংশ। গত কয়েক মাস ধরে এই অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন গতি পেয়েছে, যেখানে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো স্বাধীনতার দাবিতে সহিংস পথ অবলম্বন করছে। সেনার কনভয়ে হামলা, এমনকি আস্ত ট্রেন হাইজ্যাক করার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
গত মে মাসের শেষ দিকে খুঝদার জেলায় একটি আত্মঘাতী হামলার ঘটনায় তিন শিশুসহ পাঁচজন নিহত হন এবং প্রায় ৪০ জন আহত হন। একটি সেনা স্কুলের বাসকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছিল, যেখানে একটি আত্মঘাতী জঙ্গি বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে বাসটিতে ধাক্কা মারে। এই ধরনের ঘটনাগুলো বালুচিস্তানের সাধারণ মানুষের জীবনকে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে, তা স্পষ্ট।
ভবিষ্যতের আশঙ্কা:
এই সর্বশেষ হত্যাকাণ্ড আবারও আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং পাকিস্তান সরকারের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ৯ জন নিরপরাধ বাসযাত্রীর এমন নির্মম পরিণতি বালুচিস্তানে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা। যতক্ষণ না এই অঞ্চলের মানুষের বঞ্চনার অনুভূতি এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কার্যকলাপে লাগাম টানা যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এমন মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে। এই হত্যাকাণ্ড কেবল একটি অপরাধ নয়, এটি বালুচিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক জটিলতা এবং সেখানকার মানুষের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের এক করুণ প্রতিচ্ছবি।