পশ্চিমবঙ্গের নতুন OBC তালিকা! কী রয়েছে এই তালিকায়? রাজ্যজুড়ে বিতর্ক তুঙ্গে

পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত নতুন অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (OBC) তালিকা রাজ্যজুড়ে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বুধবার রাজ্যের অনগ্রসর কল্যাণ দপ্তর তাদের এক্স (পূর্বে টুইটার) হ্যান্ডেলে স্পষ্ট জানিয়েছে যে, এই তালিকা সম্পূর্ণরূপে আর্থিক দুর্বলতার নিরিখে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ধর্মের কোনো স্থান নেই। নতুন তালিকায় মোট ১৪০টি শ্রেণি চিহ্নিত করা হয়েছে এবং আরও দুটি শ্রেণি নিয়ে সমীক্ষা চলছে।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, বিরোধীদের আক্রমণ
মঙ্গলবার বিধানসভায় রাজ্যের এই অবস্থান স্পষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। আর্থিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতেই সমীক্ষা করে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরও বিরোধী মহলে সমালোচনার ঝড় থামেনি।

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি অভিযোগ করেছেন, এই ওবিসি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে ২০২৬ সালের রাজ্য বিধানসভা ভোটের লক্ষ্যেই। তার এই অভিযোগকে সরাসরি অস্বীকার করেছে অনগ্রসর কল্যাণ দপ্তর। দপ্তর পাল্টা দাবি করেছে, বিরোধী দলনেতা এই তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন এবং এর সঙ্গে ধর্মের কোনো যোগ নেই।

তালিকার অন্তর্নিহিত পরিসংখ্যান: ধর্মীয় ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন
অনগ্রসর কল্যাণ দপ্তর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নতুন ওবিসি তালিকাভুক্ত ১৪০টি শ্রেণির মধ্যে ৮০টি শ্রেণি মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত, যা মোট তালিকার ৫৭.১৪ শতাংশ।

OBC– ‘এ’ গ্রেড তালিকাভুক্ত ৪৯টি শ্রেণির মধ্যে ৩৬টি শ্রেণি মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত।
‘বি’ তালিকাভুক্ত ৯১টি শ্রেণির মধ্যে ৪৭টি শ্রেণি অ-মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত।
দপ্তর আরও জানিয়েছে যে, দেবাঙ্গ এবং ভারভূজা সম্প্রদায়কে ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা, তা নিয়ে পুনরায় সমীক্ষা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও কিছু শ্রেণির অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সমীক্ষা চালানো হবে বলেও জানানো হয়েছে। এই পরিসংখ্যান প্রকাশের পর স্বাভাবিকভাবেই তালিকার উদ্দেশ্য এবং ধর্মীয় ভারসাম্যের বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।

ভবিষ্যতের প্রভাব ও রাজনৈতিক রণনীতি
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় এর আগে বলেছিলেন যে, এই নতুন তালিকা প্রকাশের পর সরকারি চাকরিতে নিয়োগ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হবে। তবে, এই তালিকা নিয়ে বিজেপির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। তাদের অভিযোগ, এটি মূলত সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতি এবং ভোটব্যাঙ্কের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। তৃণমূল অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, এটি আর্থ-সামাজিক সমতার প্রতিষ্ঠার একটি পদক্ষেপ।

এই নতুন ওবিসি তালিকা একদিকে যেমন বহু পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য নতুন সুযোগের দুয়ার খুলবে, তেমনই অন্যদিকে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক এবং আইনি চ্যালেঞ্জের জন্ম দিতে পারে। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে এই তালিকা নিঃসন্দেহে রাজ্যের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী দিনে এই তালিকা ঘিরে আরও অনেক রাজনৈতিক চাপানউতোর এবং আইনি লড়াই দেখা যেতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy