পর্ন-কাণ্ডে অভিযুক্ত শ্বেতা সম্পর্কে উঠে এল বিস্ফোরক তথ্য, বিস্তারিত জেনেনিন

ডোমজুড় পর্ন-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত শ্বেতা খান, যার আসল নাম মহসিনা বেগম এবং এলাকায় পরিচিত ‘ফুলটুসি’ নামে, তার অপরাধের জগৎ নিয়ে নতুন তথ্য উঠে আসছে। অভিযোগ, ২০১৯ সালেই প্রথম স্বামীর সম্পত্তি দখলের জন্য গুন্ডা ভাড়া করে গুলি চালানোর মতো গুরুতর অপরাধে নাম জড়িয়েছিল এই মহিলার। মঙ্গলবার তার বাঁকড়ার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে যে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে, তা এই মামলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

পুলিশ মঙ্গলবার মহসিনা ওরফে ফুলটুসি ওরফে শ্বেতার বাঁকড়ার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে ফ্ল্যাটের পিছন থেকে এক গোছা চুল উদ্ধার করেছে। এই চুল ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে, বিশেষ করে মাইক্রোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে। তদন্তকারীদের অনুমান, উদ্ধার হওয়া চুল সোদপুরের নির্যাতিতার হতে পারে। খড়দা থানায় দায়ের হওয়া জিরো এফআইআরে নির্যাতিতা তার চুল কেটে নেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। হাওড়া পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, চুলের ডিএনএ মিললে ধর্ষণ-সহ জোর করে চুল কেটে নেওয়ার অভিযোগের অকাট্য প্রমাণ মিলবে, যা শ্বেতা ও তার ছেলে আরিয়ানের বিপদ আরও বাড়িয়ে দেবে।

গত শুক্রবার সকালে শ্বেতা খান এবং তার ছেলে আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে সোদপুরের এক যুবতীকে পাঁচ মাস ধরে ডোমজুড়ের ফ্ল্যাটে বন্দি করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাকে পর্নোগ্রাফি শুট করাতে চাওয়া হয়েছিল। আপত্তি জানালে তাকে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। এই মা-ছেলে বর্তমানে পলাতক। তাদের খোঁজ করতে গিয়ে তদন্তকারীরা শ্বেতার সাম্প্রতিক ওড়িশা যোগ পেয়েছেন। জানা গেছে, গত মাসে সে ওড়িশায় গিয়ে একটি ফটোশুট করিয়েছিল এবং সেখানে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার তথ্যও মিলেছে। তাহলে কি ছেলেকে নিয়ে প্রতিবেশী রাজ্যেই গা-ঢাকা দিয়েছে শ্বেতা?

শ্বেতা খানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক তৃণমূল নেতার সঙ্গে ছবি প্রকাশ্যে আসায় বিতর্ক তুঙ্গে। হাওড়া ও কলকাতার তাবড় তৃণমূল নেতা, যেমন মন্ত্রী অরূপ রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার ছবি দেখা গেছে। এমনকি তাকে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের কর্মসূচিতেও দেখা গেছে।

এতে প্রশ্ন উঠছে, শাসকদলের সঙ্গে এই যোগসূত্রকে ব্যবহার করেই কি শ্বেতা তার বেআইনি কাজকর্ম চালাত? তার পিছনে কি সত্যিই শাসকদলের বড় মাথারা রয়েছে? নাকি এই ছবিগুলো কেবল তার বেআইনি ব্যবসা চালানোর একটি কৌশল?

এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী অরূপ রায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি রীতিমতো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং বলেন যে তিনি শ্বেতাকে চেনেন না। তিনি আরও বলেন, “অনেকেই প্রভাব দেখাতে নেতা-মন্ত্রীদের পাশে ছবি তোলে। যদি সে সত্যি দলে থাকে, ‘দুর্জনের ছলে’র মানুষকে বাদ দিতেই হবে।”

তবে, মন্ত্রীর বক্তব্যকে উড়িয়ে হাওড়ার শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদেরকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন রাজ্য বিজেপির নেতা উমেশ রাই। তিনি অভিযোগ করেছেন, “শাসক দলের বদান্যতায় শ্বেতা খান বাঁকড়া থেকে রমরমিয়ে দেহব্যবসা চালিয়েছেন। একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে এই চিত্র তৃণমূলের আসল মুখ। হাওড়া জেলার তৃণমূল নেতৃত্বকে জবাবদিহি করতেই হবে। এই ধরনের অপরাধীদের সামনের সারিতে এনে তাঁরা কোন মহিলার কল্যাণ করেছেন, তার উত্তর দিতে হবে।”

এই পর্ন-কাণ্ড এবং শ্বেতা খানের রহস্যময় অতীত ও রাজনৈতিক যোগসূত্রকে ঘিরে ক্রমেই নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে, যা জনমনে তীব্র কৌতূহল ও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy