বাঁকুড়ার সিমলাপাল ব্লকের পুখুরিয়া হাইস্কুলে দ্বিতীয় সামেটিভ পরীক্ষার মাঝেই ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ নামে একটি সরকারি কর্মসূচি আয়োজিত হওয়ায় তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের একাংশ অভিযোগ করেছেন, পরীক্ষার সময়ে এমন কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট করছে। এই বিতর্কের জেরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন সিমলাপালের বিডিও মানস চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এক প্রতিবাদীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
ঘটনাটি গত শুক্রবার, ৮ আগস্টের। ওই দিন যখন স্কুলের এক অংশে পরীক্ষা চলছিল, তখন অন্য অংশে সরকারি কর্মসূচিটি শুরু হয়। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ করা হলেও তা উপেক্ষা করা হয়। পরে এক প্রতিবাদী সরাসরি বিডিও-র কাছে গিয়ে পরীক্ষা চলাকালীন এমন শিবির আয়োজনের কারণ জানতে চান। তখনই বিডিও মানস চক্রবর্তী সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে ওই প্রতিবাদীকে ‘তুলে নিয়ে যাওয়ার’ হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে বিডিও-কে এই ধরনের কথা বলতে শোনা যাচ্ছে।
প্রতিবাদীর দাবি, তিনি শুধু জানতে চেয়েছিলেন যে পরীক্ষার সময় কেন স্কুলের মধ্যে এই শিবির করা হচ্ছে। কিন্তু তার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি জানিয়েছেন যে তিনি পুরো ঘটনাটি জানেন না, তবে পরীক্ষা চলাকালীন স্কুলে এমন কর্মসূচির আয়োজন করা ঠিক হয়নি। বিডিও-র মন্তব্যে তিনিও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
অভিযুক্ত বিডিও মানস চক্রবর্তী অবশ্য তার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, শিবিরটি মূলত স্কুলের পাশের একটি ক্লাবের মাঠে হয়েছিল, শুধুমাত্র আলোচনার জন্য দুটি ক্লাসরুম ব্যবহার করা হয়েছিল। তার দাবি, এতে পরীক্ষার্থীদের কোনো অসুবিধা হয়নি। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, এক ব্যক্তি শিবিরটি বন্ধ করার হুমকি দিলে তাকে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে সতর্ক করা হয় এবং ভিডিওটি আংশিকভাবে কেটে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
এই বিষয়ে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক ফাল্গুনী সিংহবাবু জানান, শিক্ষার্থীদের কোনো অসুবিধা হবে না, এমনটা নিশ্চিত হওয়ার পরেই এই কর্মসূচি করা হয়েছিল।
বাঁকুড়ার এই ঘটনাটি বর্তমানে তুমুল বিতর্কের বিষয়। একদিকে পরীক্ষা চলাকালীন সরকারি কর্মসূচি, অন্যদিকে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ—সব মিলিয়ে সিমলাপালের এই ঘটনার পরিণতি এখন কী হয়, সেটাই দেখার বিষয়।