দীর্ঘদিনের পথ কুকুরের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরের বাসিন্দাদের। শিশু ও বয়স্কদের ওপর হঠাৎ হামলা এবং কামড়ানোর একাধিক ঘটনা শহরজুড়ে এক ভয়ের আবহ তৈরি করেছিল। এই চরম সমস্যা থেকে কাটোয়াবাসীকে মুক্তি দিতে এবার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিল কাটোয়া পুরসভা। বৃহস্পতিবার থেকে শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে পথ কুকুরদের জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধের টিকাদান কর্মসূচি, যা শহরবাসীর মধ্যে আশার আলো সঞ্চার করেছে।
সমন্বিত উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
কাটোয়া পুরসভার উদ্যোগে, স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় এবং দুটি স্বনামধন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন – জিভা ফাউন্ডেশন ও স্পোর অ্যানিমেল রেসকিউ টিম-এর সহযোগিতায় এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
কাটোয়া পুরসভার চেয়ারম্যান সমীর কুমার সাহা জানান, “শহরে কুকুরের দৌরাত্ম্য এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে প্রায় প্রতিটি মানুষ আতঙ্কে ছিলেন। বহুদিনের চেষ্টায় অবশেষে আমরা একটি আন্তর্জাতিক স্তরের এনজিওকে পাশে পেয়েছি, যারা প্রথম পর্যায়ে শহরের ৫০০টি পথ কুকুরকে ভ্যাকসিন দেবে।”
এই কর্মসূচির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, ‘মিশন র্যাবিশ’ নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রদান করা অত্যাধুনিক অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অ্যাপে প্রতিটি টিকাপ্রাপ্ত কুকুরের বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষিত থাকবে – যেমন, সেটি ভ্যাকসিন পেয়েছে কিনা, তার মালিক আছে কিনা, লিঙ্গ, বয়স, এমনকি নির্বীজন (স্টেরিলাইজেশন) হয়েছে কিনা – সমস্ত তথ্য থাকবে ডিজিটাল মাধ্যমে।
জিভা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার শ্রীতমা ব্যানার্জী এই অ্যাপের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে বলেন, “ভবিষ্যতে ওই কুকুরের কোনও অসুবিধা হলে এখান থেকেই তথ্য নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এতে প্রতিটি কুকুরের স্বাস্থ্য ট্র্যাক করা সম্ভব হবে, এবং কার্যকরভাবে রোগের বিস্তার রোধ করা যাবে।”
ধাপে ধাপে সমাধান: নিরাপদ কাটোয়ার স্বপ্ন
কাটোয়া শহরে বর্তমানে আনুমানিক ১৫০০ থেকে ২০০০ পথ কুকুর রয়েছে। এই বৃহৎ সংখ্যক কুকুরদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৫০০টি কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হবে। এই পর্ব সম্পন্ন করতে প্রায় পাঁচ দিন সময় লাগবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এরপর ধাপে ধাপে বাকি কুকুরদেরও ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনা হবে।
এই সমন্বিত উদ্যোগের ফলে শহরের সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। দীর্ঘদিনের জলাতঙ্কের আতঙ্ক থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন তাঁরা। টিকাদানের ফলে কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্কের আশঙ্কা যেমন কমবে, তেমনি সামগ্রিকভাবে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকিও হ্রাস পাবে বলে পুরসভা ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলি আশাবাদী। কাটোয়া পুরসভার এই প্রচেষ্টা একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর শহরের দিকে এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।