পঞ্চায়েত সদস্য হত্যায় জড়িত কুখ্যাত বাঘা বাঁকুড়া থেকে গ্রেপ্তার, পুলিশের জালে দাদা-ভাই

হাওড়ার হুব্বা শ্যামলের পর এবার কোন্নগরে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করা কুখ্যাত দুষ্কৃতী বিশ্বনাথ দাস ওরফে বিশার পর তার দাদা ভোলানাথ দাস ওরফে ‘বাঘা’-কে বাঁকুড়ার সোনামুখী থেকে গ্রেপ্তার করল চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ। কানাইপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য পিন্টু চক্রবর্তী খুনের ঘটনায় বাঘার যোগসাজশ রয়েছে বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। এই গ্রেপ্তারের ফলে কোন্নগর জুড়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরির পরিকল্পনাকারীদের ধরতে পুলিশ এক ধাপ এগোল।

গত শনিবার (২ আগস্ট) বিশাকে বেলঘরিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাকে জেরা করে পিন্টু চক্রবর্তী খুনের ঘটনায় বাঘার জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসে। সেই সূত্র ধরে এদিন (৩ আগস্ট) বাঘাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এখন বাঘাকে জেরা করে পিন্টু চক্রবর্তী খুনের আসল কারণ এবং এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে জড়িত মূল হোতাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।

আতঙ্ক ও প্রশাসনিক তৎপরতা:

উল্লেখ্য, চন্দননগর এলাকার অন্যান্য ব্যবসায়ীরা পিন্টু চক্রবর্তীর নৃশংস খুনের পর থেকেই গভীর আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন। জেলার শাসকদলের একজন প্রভাবশালী নেতাকে যেভাবে জনসমক্ষে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তাতে এলাকায় যথেষ্ট ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতি চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকদেরও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে যে, বাঘা ও বিশা দীর্ঘদিন ধরে কানাইপুর এলাকায় তাদের বেআইনি কাজকর্ম চালালেও, সম্প্রতি তারা নিমতা এলাকায় নিজেদের আস্তানা তৈরি করেছিল। সেখান থেকেই তারা বিভিন্ন দুষ্কৃতী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

রবিবার চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি অর্ণব বিশ্বাস বলেন, “পঞ্চায়েত সদস্য খুনের ঘটনায় বাঁকুড়া থেকে বাঘা নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আর্জি জানিয়ে শ্রীরামপুর আদালতে পেশ করা হয়। বিচারক বিশাকে ৮ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি দুজন, বিশ্বজিৎ প্রামাণিক এবং দীপক মণ্ডলকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।”

তদন্তের পরবর্তী পদক্ষেপ ও নিরাপত্তা প্রশ্ন:

পুলিশ বর্তমানে বিশাকে জেরা করছে এবং এবার বাঘাকে আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইছে। তদন্তকারীরা দুই ভাইকে আলাদাভাবে এবং একসঙ্গে জেরা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যাতে খুনের আসল কারণ এবং এর সঙ্গে জড়িত সকল তথ্য উন্মোচন করা যায়। চন্দননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে।

উল্লেখ্য, পিন্টু চক্রবর্তীকে গত বুধবার সন্ধ্যায় কানাইপুর বাজারের মধ্যে কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল। মজার বিষয় হলো, যে স্থানে খুনটি হয়েছিল, তার কিছুটা দূরেই রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর বাড়ি। আর ঘটনাস্থল থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যেই কানাইপুর পুলিশ ফাঁড়ি। এত কাছাকাছি পুলিশি উপস্থিতির মধ্যেও এমন ঘটনা ঘটায় কানাইপুরে পুলিশি নজরদারি ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন আগেই উঠেছিল। এরপরই কানাইপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাহুল বিশ্বাসকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তার জায়গায় চন্দননগর থানার পিসি পার্টিং ইনচার্জ এএসআই বিশ্বজিৎ পালকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাহুল বিশ্বাসকে চন্দননগর থানায় বদলি করা হয়েছে।

জানা গেছে, আততায়ীরা খুনের আগে ওই এলাকায় পুলিশি টহলের বিষয়েও সজাগ ছিল এবং কোন রাস্তা দিয়ে পালানো সহজ হবে, তাও আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিল। এই সমস্ত দিক বিবেচনা করে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এখন দেখার, পুলিশ এই দুই ভাইকে জেরা করে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনের আসল রহস্য কত দ্রুত উদঘাটন করতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy