নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বড়সড় স্বস্তি পেলেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য এবং শান্তিপ্রসাদ সিন্হার মতো প্রভাবশালী অভিযুক্তরাও জামিন পেয়েছেন।
গ্রেফতার ও জামিন: হাজার হাজার যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের বঞ্চিত করে, টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়ার অভিযোগে ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর নিজাম প্যালেসে ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয়েছিল কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে। প্রায় এক বছর আড়াই মাসের মাথায়, SSC-র গ্রুপ সি মামলায় তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেন।
আইনজীবী ও রাজনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া
আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের প্রতিক্রিয়া: এই জামিন প্রসঙ্গে আইনজীবী ফিরদৌস শামিম তদন্তকারী সংস্থার অকর্মণ্যতার দিকে আঙুল তুলেছেন।
-
তদন্তকারী সংস্থার অকর্মণ্যতা: তিনি বলেন, “পার্থবাবু যিনি শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, তিনি জামিন পেয়েছেন। তারপরে তাঁর অফিসাররা জামিন পাবেন এটাই স্বাভাবিক। তার কারণ, তদন্তকারী সংস্থা এই বিষয়টি, তদন্ত প্রক্রিয়াটিকে দীর্ঘায়িত করছে। এখনও পর্যন্ত ট্রায়াল সম্পন্ন করা যায়নি।”
-
অপকর্মের দায়: তিনি অভিযুক্তদের ‘অপরাধী’ বলে উল্লেখ করে বলেন, “তাঁদের অপকর্মের জন্য ২৬ হাজার ছেলে-মেয়ের সার্ভিস টার্মিনেট হয়ে গেছে। এই অপকর্মের দায়ী তো কেউ হবেই। দায় তো কাউকে নিতে হবে। যারা দায়ী, তাঁদের দায় নেওয়া উচিত।”
-
জেলমুক্তির ধারা: তিনি বলেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়—’একটার পর একটা জেলমুক্তি’ ঘটছে, যা তদন্তকারী সংস্থার অকর্মণ্যতাকে স্পষ্ট করে দেয়।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য: রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য এই জামিন নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ।
-
অপরাধ থেকে মুক্তি নয়: তিনি বলেন, “জামিন তো কেউ পেতেই পারেন। জামিন পাওয়া মানে তো অপরাধ থেকে মুক্তি পাওয়া নয়।“
-
‘প্রাতিষ্ঠানিক লুঠ’: তিনি অভিযোগ করেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের জ্ঞাতার্থে-অনুমোদনে-অনুপ্রেরণায় এই প্রাতিষ্ঠানিক লুঠকে সংগঠিত করা হয়েছিল।”
-
‘বড় মাছের খোঁজ’: তিনি আরও বলেন, “কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় জামিন পেলেন কি পেলেন না, এনিয়ে রাজ্যবাসীর কোনও উৎসাহ নেই। মানুষ মূল সূত্রে পৌঁছাতে চাইছে। মানুষ বড় মাছের খোঁজ করছে।“
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের মত: আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জামিন পাওয়াকে স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর কথায়, “জামিন পাওয়াটা একটা স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া। জামিন পাবেন, এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু, নির্ভর করছে তদন্তকারী সংস্থার তৎপরতার উপরে যে কত তাড়াতাড়ি ট্রায়ালটা হবে।”