শ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া নিয়ে কেন্দ্র সরকার, বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কড়া আক্রমণ শানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামের একটি সরকারি অনুষ্ঠানে তিনি অভিযোগ করেন যে, সংখ্যালঘু, তপশিলি জাতি, উপজাতি এবং এমনকি সাধারণ নাগরিকদের নামও ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। তিনি জনগণকে কোনো ধরনের ফর্ম পূরণের আগে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন, কারণ তাঁর মতে, এর মাধ্যমে এনআরসি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এনআরসি এবং ভোটার তালিকা নিয়ে সতর্কতা:
সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করার পর মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, “না জেনে কোনো ফর্ম ফিল আপ করবেন না। তাহলে ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ দিয়ে দেবে। তখন জোর করে এনআরসি করে দেবে।” তিনি জানান, ভোটার তালিকা দেখার নিয়মে পরিবর্তন এসেছে এবং এখন নতুন তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর তা আবার যাচাই করে নিতে হবে। যারা মনে করছেন যে তাঁদের এপিক কার্ড আছে এবং তাই কিছু করার প্রয়োজন নেই, তাঁদের এই ধারণা ভুল বলে মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন। তিনি বলেন, ২০০২ সালের পর যাদের জন্ম হয়েছে, ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য তাঁদের বাবা-মায়ের জন্ম শংসাপত্র প্রয়োজন হতে পারে, যা অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া সম্ভব নয়।
ভিন রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার:
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভিন রাজ্যে কর্মরত বাঙালি শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের প্রসঙ্গ তুলে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, গুরুগাঁও এবং আসামের ডিটেনশন ক্যাম্পে বাঙালিদের আটকে রাখা হচ্ছে। মুম্বাইয়ে একজন বাংলাভাষী ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এই ঘটনাগুলোর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “নিজের ভাষায় কথা বলা কি অপরাধ?” তিনি আরও বলেন, যারা আইন মেনে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, তাঁরাও ভারতের নাগরিক। তবে, যারা ভারতের নাগরিক নন, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র সরকার ব্যবস্থা নিলে রাজ্য সরকার তাতে হস্তক্ষেপ করবে না।
মেয়েদের শিক্ষার ওপর জোর:
এই দিন মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রাম এবং জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষার ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মা-বাবাদের অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া উচিত নয়। এখন মেয়েরাও ছেলেদের মতো সমান পারদর্শী, তাই তাঁদের লেখাপড়া শিখিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলা উচিত। তিনি বলেন, “মেয়েরা এখন ছেলেদের সমান পারদর্শী, তাঁদের বিয়ের জন্য চাপ না দিয়ে লেখাপড়া শেখানো উচিত।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর এই বক্তব্যে শ্রমিক, সরকারি কর্মচারী এবং মহিলাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন এবং জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, কোনো ধরনের চক্রান্তের শিকার না হওয়ার জন্য সচেতন থাকতে।